জিজ্ঞাসাবাদে আটক জয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য

পলাতক কর্মকর্তাদের নির্দেশেই পুলিশে আরেকটি বিদ্রোহের চেষ্টা করেছিল

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১:১০ অপরাহ্ন, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত

আনসার বাহিনীর মতো  পুলিশ বিভাগেও আরেকটি রক্তাক্ত বিদ্রোহের জন্য জেলায় জেলায় পুলিশ সদস্যদের সংগঠিত করতে বিভ্রান্ত চড়াচ্ছিল বিশেষ একদল পুলিশ সদস্য। এ লক্ষ্মে ফেসবুক পেইজে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর কে কেন্দ্র করে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছিল। এজন্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন সাবেক পলাতক বরখাস্ত লিখিত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা তেই মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত পুলিশের কথিত নেতা জয়ের স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য জানা যায়। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গতকাল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশে উস্কানির অভিযোগে যশোর পুলিশ লাইন থেকে পুলিশের কথিত নেতা শোয়াইবুর রহমান জয় ও সঞ্জীব সরকারকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে আটক করে। এরপর তাদের ফেসবুক আইডি ও লিংক থেকে উস্কানি ও বিদ্রোহের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পায়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় মামলা করে দশ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে পাঠায়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড  মঞ্জুর করে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানতে চাচ্ছেন আসলে এই উস্কানি ও বিদ্রোহে কারা কারা জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো একটি স্পর্শকাতর শৃঙ্খলা বাহিনীতে কারা উস্কানি সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে।

আরো জানা যায় পলাতক পুলিশ কর্মকর্তারা অজ্ঞাত স্থান থেকে বিভিন্ন অ্যাপসে পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের উস্কানি দিচ্ছিল। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ এলাকার ও ছাত্রলীগ করা পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকায় তাদের মাধ্যমেও পুলিশ সদস্যদের মাঝে বিভ্রান্ত চরানো হচ্ছিল। মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে পুলিশ সদস্যদের মাঝে বিতরণ করে বলা হচ্ছে কোন মূল্যে রাজধানীর রাজারাবগ পুলিশ লাইনসহ সারাদেশের পুলিশ লাইনগুলোতে বিদ্রোহ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য যত টাকার প্রয়োজন তোমাদের কাছে চলে যাবে। পুলিশকে বিদ্রোহী করে তুলতে পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হবে। এতে বন্ধ হয়ে যাবে দুর্নীতিবাজদের বিচার প্রক্রিয়া। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করলে পাশে রাষ্ট্র থেকে যেকোনো সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবার ফিরে আসতে পারবে। এভাবেই পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা  সারাদেশের পুলিশ লাইনে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের উস্কে দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন নাটকপুলিশ কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমান জয়সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান ও মনির, জয়েন্ট কমিশনার বিপ্লব কুমারসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ওই নির্দেশনা পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমানসহ ১২ থেকে ১৫জন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তা। ডিএমপির শাহজাহানপুর থানায় সাইবার ক্রাইম আইনে দায়ের হওয়া মামলায় রোববার যশোর থেকে শোয়াইবুর রহমান জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। থানা পুলিশ ও ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, নেপথ্যে থেকে সাবেক পলাতক শীর্ষ পুলিশ   কর্মকর্তার দেশেই ৫ আগস্ট এর পর রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। পরে এদের শান্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক করতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ছুটে যেতে হয়েছিল সদ্য নিয়োগ পাওয়া আইজিপি মো: ময়নুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার মো: মাইনুল হাসানকে। জীবনের ঝুকি নিয়েই তারা পুলিশ বিদ্রোহকে নিষ্ক্রিয় করে কৌশলে রাজার বাগের নিয়ন্ত্রণ নেন। পরবর্তীতে সারাদেশেই পুলিশের কর্ম বিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করতে বাধ্য হয়। বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তারা কৌশলে বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশের দায়িত্ব নিলেও দুষ্ট পুলিশ সদস্যরা থেমে থাকে নি। সাবেক কর্মকর্তাদের ইন্দনে এবং ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগে নতুন করে আবার বিদ্রোহের জন্য সংঘটিত হতে শুরু করে।   বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দমনে শেখ হাসিনা সরকারের হয়ে সবচেয়ে বেশি নৃশংস ভূমিকা রেখেছে এই পুলিশ বাহিরে কতিপয় অপেশাদার ও উচ্চবিলাশী কর্মকর্তা।। সরকার পতনের পর খোদ পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিক ব্যবহার মুক্ত ও সংস্কারে আন্দোলনের ডাক দেয় বাহিনীর অধীনস্থ সদস্যরা। যা এখন চলমান রয়েছে। রাজারবাগে আন্দোলন চলার সময় আন্দোলন জোরদার করতে এসপি ও ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মোবাইলে ফোন করেও হুমকি দেয়া হয় আন্দোলনে যোগদান করার জন্য।

সোমবার স্বঘোষিত কথিত পুলিশ নেতা শোয়াইবুর রহমানের রিমান্ডে আবেদনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসামিরা ফেসবুকে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহযোগিতায় বিভিন্ন শ্রেণি ও সপ্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সমপ্রতি বিনষ্ট করতে উসকানিমূলক বার্তা পোস্ট করেছে এবং করছে। এটা জন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে, কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে ব্যবহার হতে পারে। ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করা দরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টির কারণ উদঘাটন ও অর্থদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে আসামির ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

আদালত সূত্র জানায় আদালতে পুলিশ সদস্য বলেছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিকাল থেকে সিনিয়র অফিসাররা আমাদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রেখে পালিয়ে যান। কোটা আন্দোলনের সময় আমাদের অনেক সহকর্মী মারা গেছেন। কেন মারা গেছেন? অফিসাররা সরকারের দালালি করতে গিয়ে আমাদের জনগণের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় তাদের মরতে হয়েছে। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ পুলিশের ‘নেতা' বনে যাওয়া কনস্টেবল সোয়াইবুর রহমান জয়ের অতীত এবং বর্তমান কর্মকান্ড নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের গৃহপালিত হিসেবে পরিচিত এই পুলিশ কনস্টেবল 'পুলিশ থিয়েটার' এর সদস্য। গত আগস্টে অভিশপ্ত আগস্ট মঞ্চ নাটকে শেখ কামাল চরিত্রে দেখা যায় তাকে। গত ১৬ বছরের চাকরিতে তাকে কোনদিন পুলিশের নিয়মিত ডিউটি বা পোশাক পড়তে দেখা যায়নি। সে সবসময়ই সাবেক কমিশনার হাবিবের ছোট ভাই হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে রাজনীতি করে যেত। পুলিশের মধ্যে বৈষম্য তৈরি ও আঞ্চলিক গঠিত তরীর মাস্টারমাইন্ড ছিল এই জয়। পুলিশের বদলি ম্যাচ তদবি রং সহ বিভিন্ন দালালিতে লিপ্ত ছিল ।  ছাত্র জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি'র নেতা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করে জয়। পুলিশের বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্যোগ হিসেবে তার নাম দিয়ে উস্কানিমূলক নানা বার্তা পাঠানো হচ্ছে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের কাছে। পুলিশ কনস্টবল শেখ শোয়েবুর রহমান জয়, পিতা- শেখ হাবিবুল্লাহ, মাতা- হাসনা বেগম, গ্রাম- পিঠাভোগ, রূপসা, খুলনা'র আসল পরিচয়। এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাইনুল হাসান জানান ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর থেকেই  কতিপয় পুলিশ সদস্য বিভিন্ন দাবি দাবার আড়ালে পুলিশ বিভাগে বিদ্রোহ তৈরীর পায়তারা করছিল। তারা পুলিশের কর্মবিরতি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির চেষ্টা করেছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের কাজে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু বাইরের উস্কানিতে কতিপয় পুলিশ সদস্য পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তথ্যের ভিত্তিতে আমরা শুয়েএফ রহমান জয় নামে পুলিশ সদস্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এতে পুলিশে বিদ্রোহের আসল রহস্য রহস্য বেরিয়ে আসে। পুলিশ বাহিনীর দেশপ্রেমিক সাধারণ সদস্যরা তাদের ষড়যন্ত্রে পাবেন। বরং তাদের উস্কানি আমাদেরকে জানিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করেছে। জয় স্বীকারোক্তি মতে উস্কানিতে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য  মামলাও করা হয়েছে। অন্য সদস্যদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

পুলিশের বেশ কয়েকজন এসআই ও এএসআই  জানান, ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশ থিয়েটার নামের এই নাট্য দলটি গঠন করা হয়। সাধারণত একজন পুলিশ কনস্টেবলের পক্ষে কমিশনারের  মত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছাকাছি যাওয়া কঠিন। তবে নাট্যদলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুরের সাথে দেখা যেত সোয়াইবুর রহমান জয়কে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান , সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ২০০৯ সালের পর থেকে ডিএমপি ডিসি হেডকোয়াটার, ঢাকা জেলার এসপি, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পিএম ওয়ান ওডিআইজি এডমিন , ঢাকার  ডিআইজি ও সর্বশেষ ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব থাকার সময় পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে তার নিজস্ব বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ করে গেছেন। তার ইন্দনে ই প্রতিটি ইউনিট থেকে বিদ্রোহে উস্কানি দিচ্ছে।  বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত ও পুলিশের শৃঙ্খলা ফিরে আসলে ও পেশাদার দলীয় এবং বিশেষ এলাকার বুয়া ঠিকানায় চাকরি করা পুলিশ সদস্যদের বিপদ হতে পারে। কাউকে কাউকে জেলেও যেতে হতে পারে। এই বিষয়গুলো বুঝতে পেরে তারা পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করেন। তারা জানেন পুলিশ ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে এই সরকারের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব না। আওয়ামী পুলিশের কর্মকর্তাদের ছাত্র-জনতা খুনের জন্য দায়ী করে এক সাব-ইন্সপেক্টর বলেন, তারা আমাদের গুলি করতে বাধ্য করেছে। এখন ছাত্র জনতা হত্যার বিচার করতে হলে তারা সবার আগে ফাঁসবেন। তাই নিজেদের দায়মুক্তি আদায়ের জন্য তারা পুরো ফোর্সকে উস্কানি দিয়েছিলেন, যা ব্যর্থ হয়েছে।

সূত্র জানায়, পুলিশের পলাতক শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও বিচার এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবী যখন জোরালো হচ্ছে তখন ঐসব পলাতক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই কনস্টবল শোয়েবুর রহমান আন্দোলনের নেতা সেজে সারাদেশের পুলিশ সদস্যদেরকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছ। ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব এই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের জন-শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত না হয়ে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগী এই শোয়েবুরের আহবানে বিভ্রান্ত না হয়ে পুলিশ সদস্যরা ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়িয়ে দেশগঠনে ভূমিকা রাখুক এটাই জনগণের প্রত্যাশা।


সর্বশেষ

Loading data...
Loading data...
Loading data...
Loading data...

জনপ্রিয়

Loading data...
Loading data...
Loading data...
Loading data...