‘পৃথিবীর সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ ফ্র্যাংক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন

বিশ্বব্যাপী কোর্টরুম ভিডিও দিয়ে পরিচিতি পাওয়া বিচারক ফ্র্যাংক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিনের সাহসী লড়াইয়ের পর তিনি শান্তিপূর্ণভাবে মারা যান বলে নিশ্চিত করেছে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ।
ফ্র্যাংক ক্যাপ্রিওকে অনেকেই চিনতেন ‘Catchings in Providence’ নামক আদালতভিত্তিক টিভি শোয়ের মাধ্যমে, যেখানে তিনি ছোটখাটো ট্রাফিক মামলায় রায় দিতেন অপ্রচলিত কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। সেইসব মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দয়া, সহানুভূতি ও রসবোধের মাধ্যমে বিচারক ক্যাপ্রিও লাখো মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১
তার ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন বিবৃতিতে বলা হয়, সহানুভূতি, বিনয় ও মানুষের ভেতরের ভালোত্বে অটল বিশ্বাসের কারণে বিচারক ক্যাপ্রিও লাখো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। আন্তরিকতা, রসবোধ আর মমত্ববোধের কারণে চেনা সবার হৃদয়ে তিনি অমলিন হয়ে থাকবেন।
১৯৩৬ সালের ২৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্সে জন্মগ্রহণ করেন ক্যাপ্রিও। আইন পেশায় আসার আগে তিনি শিক্ষকতা করতেন। রাতে পড়তেন সাফোক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ল’-তে। এরপর প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় তিনি যুক্ত ছিলেন আইন ও বিচারকাজে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিন জাতীয় বাস্কেটবল তারকা নিহত
১৯৮৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রভিডেন্স মিউনিসিপ্যাল কোর্টে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারক হিসেবে তার রায়গুলো প্রথাগত হলেও তিনি বিচারকে দেখতেন মানবিকতার চোখে। কখনও গরিব বা অসহায় অভিযুক্তদের জরিমানা মওকুফ করে দিতেন, কখনও আবার ছোট শিশুদের অংশগ্রহণে মামলার নিষ্পত্তি করতেন হালকা-ফুলকা আবহে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৮৭তম জন্মদিনের কিছু পর ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় ক্যাপ্রিও জানান, তিনি অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন,
আপনাদের প্রত্যেককে অনুরোধ করব আমার জন্য প্রার্থনা করত... আমার অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়েছে, যা ভীষণ কঠিন এক ধরনের ক্যানসার।
তার জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ প্রসঙ্গে ২০২৪ সালে এনবিসি বস্টনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
কখনো কখনো শুধু কারও কাঁধে হাত রেখে বলে দেওয়া যে, তুমি তার ওপর বিশ্বাস রাখো—এটাই একজন মানুষের জীবন পাল্টে দিতে পারে।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ও ভক্ত। অনেকে লিখেছেন, “তিনি ছিলেন আদালতের মঞ্চে মানবিকতার প্রতিচ্ছবি।
ফ্র্যাংক ক্যাপ্রিও রেখে গেছেন স্ত্রী জয়েস ক্যাপ্রিও, পাঁচ সন্তান, সাত নাতি–নাতনি এবং দুই প্রপৌত্র।