সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা
ত্রয়োদশ নির্বাচন ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা খুব শিগগিরই নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। এটি যেন সুন্দর হয়, তার জন্য সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী নির্বাচন হবে উৎসবমুখর, যেখানে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তিনি মনে করেন, আসন্ন নির্বাচন ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমরা বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মানজনক ও বৈশ্বিক সহবস্থানে বিশ্বাসী, তবে যেকোনো বহিঃশত্রুর আগ্রাসী আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় সশস্ত্রবাহিনী সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের উত্থান, পতন ও পরিণতি
প্রধান উপদেষ্টা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে এবং এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু হবে। এছাড়া, সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন। ফ্যাসিস্ট আমলে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি হয়নি, তবে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশ সেনাদের অবদানের প্রশংসা করা হয়েছে। বর্তমানে ১০টি শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা সদস্যরা কাজ করছেন। বাংলাদেশ বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। কাতারও আমাদের কাছ থেকে জনবল নেবে। এগুলো দেশের জন্য গৌরবের বিষয়।
আরও পড়ুন: অবসরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ
১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণ সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন, যা বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। তিনি শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদেরও স্মরণ করেন।
তিনি স্মরণ করান, মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। এই যুদ্ধে অর্জিত বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে বাঙালি সেনারা সেনানিবাস ত্যাগ করে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সাধারণ জনগণও সর্বস্ব নিয়ে অংশ নেন। যুদ্ধটি সর্বাত্মক জনযুদ্ধে রূপ নেয়। যুদ্ধরত সব বাহিনীকে ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস’ নামে একীভূত করা হয় এবং দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে অসামান্য সাহসিকতার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, নৌবাহিনীর সাবমেরিনার ও নাবিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘অপারেশন জ্যাকপট’ অভিযান সফল হয়। বিমান বাহিনীর ‘কিলোফ্লাইট’ অভিযানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এসব অভিযান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
প্রধান উপদেষ্টা নবীন প্রজন্মকে অনুরোধ করেন, প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের সৃজনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত ও জীবিত ছাত্র-জনতার প্রতি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন, যাতে তাদের ত্যাগে অর্জিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণ করেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়। এই দিন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করেন, যা মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ত্বরান্বিত করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।





