জলদস্যুর কবলে জাহাজ
জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের সর্বশেষ ফোনালাপ

তেইশ জন নাবিক ও ক্রুসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ আটক করেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের নাবিক সাজ্জাদ হোসেন (২৮)। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১ নম্বর বৈরাগ ইউনিয়নের মো. গাজু মিয়ার ছেলে।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক সাজ্জাদ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে বাড়িতে ভাবিকে ফোন করে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘জলদস্যুরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। দোয়া করো।’ এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন সাজ্জাদ। ফোনে এ কথা শোনার পর কান্না থামছে না মা সমশাদ বেগম ও বাবা গাজু মিয়ার। পরিবারের সবার মনে দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন: কমলনগরে কিশোর গ্যাং লিডার ও জুয়াড়ি মিলন গ্রেপ্তার!
সাজ্জাদ পরিবারকে জানিয়েছে, জলদস্যুরা স্পিডবোট নিয়ে জাহাজটির চারদিকে ঘিরে ফেলে। একদল জাহাজে উঠে পড়ে। সবার হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র। জাহাজের সবাই আতঙ্কিত।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান স্ত্রী মিনা আজমিনকে পাঠানো শেষ ভয়েস মেসেজে বলেছেন, ‘আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের মেরে ফেলবে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিও।’
আরও পড়ুন: ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে শহীদ মিনারে হাজার হাজার শিক্ষক
প্রথম রোজার ইফতারের পর স্বামীর পাঠানো এই মেসেজ পেয়ে বারবার মূর্ছা যান আতিক উল্লাহ খানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল ৫টার পরে মা ও স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে সবশেষ কথা বলেন। তৌফিকুল ইসলামের স্ত্রী জোবায়দা নোমান বলেন, বিকেল ৫টার দিকে কথা হয়েছিল। তিনি ফোনে বলেছেন- দোয়া করো। আমাদেরতো সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়ত আর যোগাযোগ হবে না। কী হবে কিছুই তো আসলে জানি না। এটাই শেষ কথা। এরপরে আর কথা হয়নি।
চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন ২৩টি জাহাজের একটি এমভি আবদুল্লাহ। এর পণ্য পরিবহন ক্ষমতা ৫৮ হাজার টন। জাহাজটি কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেডের। মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।