মিয়ানমার সীমান্তে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, উখিয়া-টেকনাফজুড়ে আতঙ্ক

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে আসা ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত প্রায় ১১টার দিকে ৩ থেকে ৪ মিনিটের ব্যবধানে টানা কয়েক দফা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের ওপারে সংঘাত চললেও মাঝেমধ্যে গুলির শব্দ শোনা যেত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এত তীব্র ও আকস্মিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি।

আরও পড়ুন: শিবপুর প্রেসক্লাবের আসাদ সভাপতি, মাহবুব খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। হোয়াইক্যং, পালংখালী, রাজাপালং, ঘুমধুমসহ সীমান্তবর্তী অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ এসব শব্দ শুনতে পান।

পালংখালীর রহমতের বিল এলাকার বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন বলেন, হঠাৎ বজ্রপাতের মতো বিকট শব্দ হয়। প্রথমে বুঝতেই পারিনি কী ঘটছে। গোলাগুলির মতো মনে হয়নি, শব্দটা ছিল অন্যধরনের।

আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

কুতুপালংয়ের বাসিন্দা হৃদয় চৌধুরী জানান,শব্দে মাটি কেঁপে ওঠার মতো অনুভূতি হয়েছে। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প হয়েছে। পরিবার নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসি।

একই বিস্ফোরণের শব্দ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকাতেও অনুভূত হয়। রোহিঙ্গা চিত্রগ্রাহক সাহাত জিয়া হিরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী উত্তর মংডু এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে, যার শব্দ বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছেছে।

রাখাইনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম *মংডু ডেইলি নিউজ* ও *আরকান আপডেট* জানায়, শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত জান্তা বাহিনীর এসএসএ যুদ্ধবিমান উত্তর মংডুর কিয়াও চাউং ডিভিশন ও গান চাউং ব্যাটালিয়নে অন্তত তিন দফা গোলাবর্ষণ করে। এ সময় আকাশে একটি ওয়াই-১২ বিমান উড়তে দেখা গেছে বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী সংগঠন আরকান আর্মির মধ্যে রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২৭১ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে আরকান আর্মি। জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এই সংঘাতে অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে বিজিবি উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দিন জানান, রাত ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে ১০টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে শূন্যরেখা থেকে আনুমানিক ১৩ কিলোমিটার ভেতরে মিয়ানমারের বলিবাজার এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, মিয়ানমার বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান তিন দফায় বোমা নিক্ষেপ করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১৩ ও ১৭ ডিসেম্বরেও সীমান্ত এলাকায় অনুরূপ গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়, যা সীমান্তবাসীর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।