গার্ডিয়ানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে চিঠি দিল বিজিএমইএ

দেশের নারী পোশাক শ্রমিককে যৌনকর্মী হিসেবে তুলে ধরে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি সংবাদকে নারীদের জন্যে মানহানিকর উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাই কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বুধবার (৩ জানুয়ারি) ব্রিটিশ হাই কমিশনার বরাবর এ চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের এক নারী পোশাক শ্রমিককে যৌনকর্মী হিসেবে তুলে ধরে ‘ওমেন ম্যাকিং খ্রিষ্টমাস জাম্পারস ফর ইউকে টার্নস টু সেক্স ওয়ার্ক টু পে বিল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। ওই সংবাদে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ও শ্রমিককে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা মিথ্যা ও বানোয়াট। নারী ক্ষমতায়নের এ সময়ে এসে এমন নিবন্ধ অবশ্যই পুরো পোশাক শিল্পের জন্যে অবমাননাকর। এতে আরও বলা হয়, ‘নারীর ক্ষমতায়নে তৈরি পোশাক শিল্প খাতের ভূমিকাকে উপেক্ষা করে প্রতিবেদনটিতে এ খাতকে একটি নিপীড়ক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। লাখ লাখ বাংলাদেশি নারী আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে তাদের পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের পাশপাশি সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। লাখ লাখ সুবিধাবঞ্চিত নারীর জন্য এ শিল্প খাত হচ্ছে প্রধান কর্মসংস্থানের উৎস। এ শিল্প খাত নারীদের কর্মদক্ষতা উন্নয়নে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে নারীদের সাক্ষরতার হার বেড়েছে।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনকে পক্ষপাতমূলক উল্লেখ করে বিজিএমইএ চিঠিতে উল্লেখ করেছে, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে লাখ লাখ নারী শ্রমিকের সংগ্রামকে অসম্মান করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ যে এমন ভুল প্রতিবেদনের শিকার এবারই প্রথম হয়নি, সেই বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এর আগেও দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে একই রকম চাঞ্চল্যকর তথ্যাদির উল্লেখ করা হয়েছে, যার কোনো সত্যতা নেই। কাজেই আমরা সংবাদকর্মীদের কাছে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের প্রত্যাশা করি।
আরও পড়ুন: প্রথম ১০ দিনে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করলেন ৯৬ হাজারের বেশি করদাতা
চিঠিতে হাই কমিশনারকে অনুরোধ করা হয় যেন, তারা গার্ডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং নির্ভুলভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে অনুরোধ করা হয়। প্রসঙ্গত, মার্কিন ৮ কংগ্রেসম্যানের চিঠির পর বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের যাপিত জীবন নিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে গত ২৩ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে ফ্রিল্যান্সার লেখক তাসলিমা দাবি করেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে নারী পোশাক শ্রমিকরা সন্তান ও নিজের জীবন বাঁচাতে যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন।
‘ওমেন ম্যাকিং খ্রিষ্টমাস জাম্পারস ফর ইউকে টার্নস টু সেক্স ওয়ার্ক টু পে বিল’ শিরোনামে ওই খবরে রুবি রফিক (ছদ্মনাম) নামে এক পোশাক শ্রমিকের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয়, মূল্যস্ফীতির কারণে যেভাবে জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে, তাতে রাতের বেলা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই রুবির কাছে। যদিও এটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান তৈরি পোশাক খাতকে লক্ষ্য করে দ্য গার্ডিয়ানের স্মিয়ার ক্যাম্পেইন বলে মন্তব্য করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: পাম অয়েলের দাম লিটারে কমলো ১৯ টাকা
বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, চীনের পর বাংলাদেশের পোশাক খাত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক। তাছাড়া গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে মাস সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) নিট পোশাক রফতানিতে চীনকে টপকে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের, যাদের বেশিরভাগই নারী। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮৩ শতাংশই আসে এ তৈরি পোশাক খাত থেকে।