ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার অনুমোদন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি কার্যকর

Sadek Ali
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ন, ১০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২:৩৩ অপরাহ্ন, ১০ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলিসরকার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি অনুমোদন করেছে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

শুক্রবার ভোরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুক্তিটি অনুমোদন করা হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে গাজায় দুই বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটানোর অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজায় প্রথম দফায় মুক্তি পেলেন যারা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক্স (পূর্বের টুইটার) পোস্টে জানান, “সরকার জীবিত ও মৃত—সব জিম্মির মুক্তির কাঠামো অনুমোদন করেছে।”

দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাসের হাতে আটক সর্বশেষ জিম্মিদের ফেরানোর এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্বস্তি ও আনন্দের ছাপ ফুটে উঠেছে।

আরও পড়ুন: ঢাকায় আসছেন ড. জাকির নায়েক

হামাসের নির্বাসিত নেতা খালিল আল-হাইয়া জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে যুদ্ধের সমাপ্তির নিশ্চয়তা পেয়েছেন।

ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এরপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

বর্তমানে গাজায় ২০ জন ইসরায়েলি জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, ২৬ জন মৃত, এবং দুইজনের ভাগ্য অজানা। হামাস জানিয়েছে, নিহতদের মরদেহ উদ্ধারে জীবিতদের মুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে।

চুক্তি কার্যকর হলে গাজায় বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করবে। ইসরায়েলি হামলায় গৃহহীন হয়ে লাখো মানুষ এখন ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

চুক্তিটি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে যুদ্ধ বন্ধের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হবে এটি। তবে বেশ কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি সূত্র জানায়, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। হামাস ইসরায়েলের কারাগারে আটক শীর্ষ ফিলিস্তিনি নেতাদেরও মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।

এ ছাড়া ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অন্যান্য বিষয়—যেমন যুদ্ধ শেষে গাজা কে শাসন করবে এবং হামাসের ভবিষ্যৎ ভূমিকা—এখনও আলোচনার অপেক্ষায়।

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোটের ভেতরেও এই চুক্তি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির হুমকি দিয়েছেন, হামাসকে ভেঙে না দিলে তিনি সরকার ভেঙে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেবেন।

তবু যুদ্ধের অবসান ও জিম্মি ফেরত আসার ঘোষণায় উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো অঞ্চলে।

গাজার খান ইউনুসের আবদুল মজিদ আবদ রব্বো বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, রক্তপাতের অবসান হয়েছে। গাজা, আরব বিশ্ব, এমনকি সারা দুনিয়াই আজ খুশি।

তেলআবিবের ‘হোস্টেজেস স্কয়ারে’ জিম্মি পরিবারের সদস্যরা উল্লাস প্রকাশ করেছেন। একজন মা বলেন, আমি শ্বাস নিতে পারছি না, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি রবিবার মিশরে সম্ভাব্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। ইসরায়েলি পার্লামেন্টের স্পিকার তাকে সংসদে ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন—যা ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্য হবে।

চুক্তিটি আরব ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন পেয়েছে এবং ট্রাম্পের জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ফ্রান্সের প্যারিসে পশ্চিমা ও আরব দেশগুলো গাজা পুনর্গঠন ও শান্তিরক্ষা বাহিনী গঠনের বিষয়ে বৈঠক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ২০০ সেনা পাঠাবে যারা মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সদস্যদের সঙ্গে যৌথ টাস্কফোর্সে কাজ করবে, যদিও গাজার ভেতরে কোনো মার্কিন সেনা থাকবে না।