বলছে জাতিসংঘ

ইতিহাসের সবচেয়ে গরম বছরগুলোর একটি হতে যাচ্ছে ২০২৫

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:৪৭ অপরাহ্ন, ০৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১:৪৭ অপরাহ্ন, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

২০২৫ সাল ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণ বছর হিসেবে রেকর্ডে নাম লেখাতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। চলতি বছরই পৃথিবী ইতিহাসের সবচেয়ে গরম তিনটি বছরের একটি হতে যাচ্ছে, যা জলবায়ু সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) প্রকাশিত জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ সাল রেকর্ড অনুযায়ী ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ তিন বছর হবে। সংস্থার ১৭৬ বছরের রেকর্ড অনুযায়ী, চলতি বছরটি দ্বিতীয় বা তৃতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ বছর হতে পারে।

আরও পড়ুন: ভারত সফরের ইঙ্গিত, মোদিকে ‘মহান ব্যক্তি’ বললেন ট্রাম্প

ডব্লিউএমও জানায়, গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতে আরও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হবে। ২০১৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিটি বছরই ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ ১১ বছরের মধ্যে একটি থাকবে বলেও সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।

ডব্লিউএমওর মহাপরিচালক সেলেস্টে সাওলো বলেন, “সবকিছু বিবেচনায় আগামী কয়েক বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

আরও পড়ুন: ফিলিপাইনের পর ভিয়েতনামে আঘাত হানল ঘূর্ণিঝড় কালমেগি, ব্যাপক সতর্কতা জারি

২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির নিচে এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্ব এখনো ব্যর্থ— এমনটাই বলছে ডব্লিউএমও।

সাওলো আরও বলেন, “অভূতপূর্ব এই উষ্ণতা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে স্পষ্ট যে আমরা সাময়িকভাবে হলেও ১.৫ ডিগ্রির সীমা অতিক্রম করব। তবে শতাব্দীর শেষ নাগাদ এই তাপমাত্রা পুনরায় কমিয়ে আনা সম্ভব এবং তা অত্যন্ত জরুরি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এ সময়ে বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিও রেকর্ড ছুঁয়েছে।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) জানায়, গত বছর বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২.৩ শতাংশ বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ভারত, এরপর চীন, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা মানবজাতির জন্য এক ‘নৈতিক ব্যর্থতা’। ১.৫ ডিগ্রির ওপরে উষ্ণতা বৃদ্ধি অর্থনীতি ধ্বংস করবে, বৈষম্য বাড়াবে এবং অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতি ডেকে আনবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এখনই দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এই সীমা অতিক্রম যতটা সম্ভব কম এবং স্বল্পস্থায়ী হয়।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে বরফের বিস্তার ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বন্যা, দাবদাহ ও দাবানলের মতো জলবায়ু-সম্পর্কিত দুর্যোগে জীবন, জীবিকা ও খাদ্যব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লেগেছে।

তবে আশার কথা হলো, গত কয়েক বছরে বহু দেশ দুর্যোগ আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০১৫ সালে যেখানে ৫৬টি দেশ এমন ব্যবস্থা চালু করেছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ১১৯ দেশে পৌঁছেছে। তবুও বিশ্বের ৪০ শতাংশ দেশ এখনো এমন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত।

ডব্লিউএমও বলেছে, “এই ঘাটতি দূর করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”