মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষ স্বীকার, রাজসাক্ষী হতে চান সাবেক আইজিপি মামুন

গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের সময় নিজেই দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন তিনি।
আদালতে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তার কাছে জানতে চান, তিনি দোষী না নির্দোষ। জবাবে সাবেক এই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমি দোষ স্বীকার করছি এবং মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত পরিস্থিতির সত্য এবং বিস্তারিত তথ্য দিতে ইচ্ছুক।”
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ে জাতীয় বেতন কমিশনের প্রথম সভা আজ
আদালত তার এই আবেদন মঞ্জুর করে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে। একইসঙ্গে, কারাগারে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “যদি রাজসাক্ষী হিসেবে কেউ সত্য, পূর্ণাঙ্গ এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য দেন, তাহলে আদালত তার সাজা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন, অথবা আদালতের বিবেচনায় অন্য কোনো উপযুক্ত আদেশ দিতে পারেন।”
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর
সাবেক আইজিপির রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন প্রসঙ্গে প্রসিকিউশন বলছে, “যেহেতু তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে অন্যদের বিরুদ্ধেও সত্য উদঘাটনের কথা বলছেন, তাই তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আদালতের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তিনি সাক্ষ্য দেবেন এবং তার ভিত্তিতে অপরাধীদের বিচারে সহায়তা করবেন।”
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, “তার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছি এবং আদালত যথাযথ আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।”
আইনি ভাষায়, কোনো অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত অথবা এর গোপন তথ্য জানেন এমন কেউ যদি ক্ষমা পাওয়ার শর্তে অপরাধের বিস্তারিত ঘটনা, মূল অপরাধী ও সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে স্বতঃস্ফূর্ত সাক্ষ্য দেন, তাহলে তাকে রাজসাক্ষী (Approver) বলা হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ এবং ৩৩৯ ধারা, সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারা এবং পিআরবি বিধি ৪৫৯ ও ৪৮৬–এ এ সংক্রান্ত বিধান রয়েছে।
দায়রা আদালতে বিচারাধীন এমন কোনো মামলায় যেখানে সর্বোচ্চ ১০ বছর বা তার বেশি সাজা হতে পারে সেখানে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজ অপরাধের তদন্ত বা বিচার চলাকালীন সময়ে যে কাউকে রাজসাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত থাকে, তাকে অবশ্যই পুরো ঘটনা সত্যভাবে আদালতে তুলে ধরতে হবে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৯ ধারা অনুযায়ী, রাজসাক্ষী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেন বা শর্ত অনুযায়ী সত্য বিবরণ না দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আগের অপরাধে আবার মামলা চালানো যায়। তবে তাকে অন্য আসামিদের সঙ্গে একত্রে বিচার করা যাবে না।