ছেলের ‘পরকীয়া ঠেকাতে’ নেপালের ফ্লাইটে ‘বোমা’ থাকার উড়ো ফোন মায়ের: র্যাব

ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যে ফ্লাইটটি নিয়ে এত আলোচনা, তাতে আদতে কোনও বোমা ছিল না। বরং, এটি ছিল ‘প্রেমিকাকে নিয়ে’ ছেলের নেপাল যাওয়া ঠেকানোর জন্য একজন মায়ের ব্যর্থ এক প্রচেষ্টা।
শনিবার সকালে ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে বোমা সংক্রান্ত ওই ভুয়া ফোন কল ও তার নেপথ্যের উদ্দেশ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান।
আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট ঘিরে আ. লীগ-ছাত্রলীগকে সড়কে নামতে দেওয়া হবে না: ডিএমপি কমিশনার
এর আগে, গতকাল শুক্রবার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে এক নাম্বার থেকে কল করে জানানো হয় যে বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটিতে বোমা আছে। এই খবর পেয়ে বিমানটির যাত্রা স্থগিত করা হয়।
যদিও শেষ পর্যন্ত বিমানে কোনও বোমা পাওয়া যায়নি। তখন বোঝা যায় যে কলটি ভুয়া ছিল।
আরও পড়ুন: সরকারি প্রশিক্ষণে বাড়লো ভাতা ও সম্মানী
এরপর এই ঘটনার পেছনে কারা আছে, তা বের করার জন্য র্যাব অনুসন্ধানে নামে এবং সারারাত অভিযান পরিচালনা করে এই ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে।
কী হয়েছিলো?
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই পুরো বিষয়টি ছিল পরকীয়া প্রেম কেন্দ্র করে।
তার বর্ণনায়, ওই বিমানের একজন যাত্রী তার প্রেমিকাকে নিয়ে শুক্রবার বিকালে ওই ফ্লাইটে করে নেপালে যাচ্ছিলেন।
“তার মা ও তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারেন। তার যাত্রা বন্ধের জন্য তারা প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু কোনোভাবেই সক্ষম হন না,” বলছিলেন তিনি।
“তখন ওই ছেলের এক বন্ধু পরামর্শ দেয় যে যদি এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে জানানো হয় যে এখানে বোমা আছে, তাহলে হয়তো যাত্রা বন্ধ হবে।”
ওই পরামর্শ মেনে ওই ব্যক্তির মা বিমানবন্দরে বোমা থাকার কথা জানিয়ে টেলিফোন করেন, যার ফলশ্রুতিতে এই ঘটনাটি ঘটে।
ফোনকলটি পেয়ে বিমানটি থামিয়ে প্রায় “তিন থেকে চার ঘণ্টা” তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু বিমানে বোমা জাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। তখন স্পষ্ট হয় যে কলটি সঠিক ছিল না।
সেই সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একটি অজ্ঞাতনামা নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় যে, বিমানের ফ্লাইটে বোমা আছে। সেই সময় বিমানটি উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সবাইকে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়।’’
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ঐ বিমানটির।
এরপর বিমানবন্দরের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সেখানে দিয়ে বিমানটির ভেতরে তল্লাশি চালায়।
কিন্তু তল্লাশিতে কিছু না পাওয়ায় পরবর্তীতে গতকালই এটি কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
র্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানটি চলে যাওয়ায় যে ছেলে ও তার বান্ধবীকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তারাও সেই ফ্লাইটে করে নেপাল চলে গিয়েছেন।
এরপরে এই ঘটনার তদন্ত করতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরে তদন্ত চালিয়ে এই ঘটনায় ওই ব্যক্তির মা, তার স্ত্রী এবং ওই বুদ্ধিদাতা বন্ধুকে আটক করা হয়েছে।
কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি
র্যাব মহাপরিচালক জানান, এর আগেও ইতোপূর্বেও বাংলাদেশে এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো। টেলিফোনে বোমার খবর দেওয়া হয়েছে, পরে আর পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে ভবিষ্যতে আবারও কেউ যদি এই ধরনের কিছু করে, তাহলে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
কারণ, “এই ঘটনা আমাদের জাতীয় এয়ারলাইন্সের ও দেশে-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুণ্ণ হয়,” বলছিলেন শহিদুর রহমান।