দল বাবার ৩৬৫ মামলার মূল্য দিলো না

ইসহাকপুত্রের আবেগঘন স্ট্যাটাসে উত্তাল ঢাকা-৭

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:০৪ অপরাহ্ন, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:০৪ অপরাহ্ন, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গন একেবারে উত্তপ্ত। যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। তাঁরা অভিযোগ করছেন—পুরান ঢাকার ত্যাগী, নির্যাতিত ও দীর্ঘদিন মামলায় জর্জরিত নেতাদের প্রতি চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশান কার্যালয়ে দ্বিতীয় ধাপের ঘোষিত ৩৬টি আসনের তালিকা প্রকাশ করেন। এতে ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নাম আসে সাবেক ছাত্রনেতা, দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমানের।

আরও পড়ুন: মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি পেলেই ঢাকায় আসবে কাতারের রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

বিক্ষোভে উত্তাল পুরান ঢাকা:

মনোনয়ন ঘোষণার পরই ইসহাক সরকারের সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিল–প্রতিবাদে ইসহাক সরকার নিজেও অংশ নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে ব্যপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়—অসংখ্য নেতাকর্মী ইসহাকের প্রতি সংহতি জানান।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে

হ্যান্ডকাপ পরা বাবার ছবি ফেসবুকে, ছেলের আবেগঘন স্ট্যাটাস ভাইরাল:

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসহাকের ছেলে ইশফাক সরকার নিজের ফেসবুক আইডিতে বাবার হ্যান্ডকাপ পরা একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন—

দল আমার বাবাকে ৩৬৫ মামলায় ২২ বছরের সাজার মূল্য দিলো না।

১৮ বছরে একটি মামলাও খায়নি, একদিন জেলেও যায়নি—এমন লোককে মনোনয়ন দেওয়া হলো! আর বলা হলো এটা দলের সিদ্ধান্ত। তাহলে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তগুলো নেয় কারা?

স্ট্যাটাসটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। কয়েকশো নেতাকর্মী মন্তব্য করে ইসহাক সরকারের প্রতি সমর্থন জানান। শুক্রবার সকালে ইসহাক সরকারও নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে স্ট্যাটাসটি শেয়ার করে লেখেন—“আল্লাহ ভরসা।”

সংকটময় সময়েই কেন মনোনয়ন?—ইসহাক সরকারের প্রশ্ন:

শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসহাক সরকার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ থাকায় দল সব রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। ঠিক এমন সংকটময় মুহূর্তে হঠাৎ মনোনয়ন ঘোষণা করে নেতাকর্মীদের মনে আঘাত দেওয়া হয়েছে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন—

মনোনয়ন দুই দিন পরে দিলেও কি সমস্যা ছিল? এমন সময়ে কেন এই সিদ্ধান্ত?

যিনি ১৮ বছর মাঠে ছিলেন না, তিনি কীভাবে প্রার্থী?

ইসহাক সরকারের দাবি, পুরান ঢাকা আন্দোলন–সংগ্রামের ঐতিহাসিক ঘাঁটি। এখানে বছরের পর বছর যারা মামলার বোঝা বহন করেছেন, জেল–জুলুম সহ্য করেছেন—নেতাকর্মীরা তাদের মধ্য থেকেই প্রার্থী চেয়েছিলেন।

কিন্তু যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে— তিনি এই এলাকার নিয়মিত ভোটার নন, গত ১৮ বছর আন্দোলনের মাঠে দেখা যায়নি, তাঁর নামে একটি মামলাও নেই

ইসহাকের প্রশ্ন—

যাকে কখনো এলাকায় দেখা যায়নি, তাকে চাপিয়ে দেওয়া হলো কেন? এতে কি আবারও মাইনাস ফর্মুলার ছায়া দেখছি না?

ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাতকারীরাই নমিনেশন পাচ্ছেন—অভিযোগ:

ইসহাক অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন মামলায় ক্লান্ত নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে যাঁরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা করেছেন—তারাই মনোনয়ন পাচ্ছেন।

“এতে নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।”—বলেন ইসহাক।

মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি, তারেক রহমানের প্রতি খোলা আবেদন:

তিনি হাইকমান্ডের কাছে দাবি জানান—ঢাকা-৭ আসনের মনোনয়ন বাতিল করে পুরান ঢাকার কোনো নির্যাতিত পরিবার থেকে কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করা হোক।

সাবেক এ যুবদল নেতা তারেক রহমানের প্রতিও সরাসরি আবেদন জানিয়ে বলেন—

আপনি বলেছিলেন তিনটি ক্রাইটেরিয়া- 

১) নির্যাতিতদের থেকে প্রার্থী

২) যারা মাঠে ছিল

৩) যারা এলাকায় জনপ্রিয়

কিন্তু এই নমিনেশনে তিনটির একটিও মানা হয়নি। তাই জনগণের চাপে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে।