সিলেটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট: ১০ দিন থেকে বন্ধ কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশন

Sanchoy Biswas
জুলফিকার তাজুল, সিলেট
প্রকাশিত: ৫:৫০ অপরাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৭ অপরাহ্ন, ০৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
  • ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে তাই বলা যাচ্ছে না কতদিনের ভেতর ঠিক হবে প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ আব্দুল কাদের

সিলেটে সেই পুরনো রুপে দেখা দিয়েছে বিদুৎ বিভ্রাট। আবারও ঘন ঘন লোডশেডিং।  পতিত আওয়ামী সরকারের সময়ে সিলেটে লোডশেডিংয়ের যাঁতাকলে চরম অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ জনগণ। অন্তবর্তীকালীন সরকারের শুরুতে লোডশেডিংয়ের নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় সিলেটবাসী। 

কিন্তু গত ১০ দিন থেকে সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ সরবরাহের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র কুমারগাঁও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বিকল হয়ে বন্ধ রয়েছে। এদিকে কুমারগাঁও বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জাতীয় গ্রীডের ন্যাশনাল লোড ডেচপাচ সেন্টার (এনএলডিসি) সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। 

আরও পড়ুন: ২২ দিনেও মিলেনি রাসেলের খোঁজ, আটক ৩

শুক্রবার এনসসিপির জুলাই পদযাত্রার জন্য বিদুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও গত বৃহস্পতিবার চাহিদার প্রায় ৩৩ শতাংশ লোডশেডিং ছিল সিলেটে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছে ঘন ঘন  লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের  সহসা উপায় নেই। কুমারগাঁও ২২৫ মেগাওয়াট  উৎপাদন কেন্দ্র চালু না হলে দিন দিন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্রটি এখন বিকল হয়ে আছে।

আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশা ও শীতে জনজীবন বিঘ্নিত


বিকল হয়ে যাওয়া এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলীও অবসরে চলে গেছেন। এই কেন্দ্রের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন,  উৎপাদন কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজে অনেক দিন লেগে যেতে পারে। 

এদিকে, চলতি তীব্র তাপদাহ ও চলমান এইচএসসি পরীক্ষার সময়ে সিলেটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। দিনে গড়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে নগরবাসীদের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কুমারগাঁও একমাত্র জেনারেশন স্টেশন যেখান থেকে  সিলেট, মৌলভীবাজার সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে  স্থানীয় ভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এটা বিকল হয়ে পড়ার পর চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার (এনএলডিসি)। তাই সিলেটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে।দ্রুত কুমারগাঁওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন চালু না করলে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়বে সিলেট নগরীর বাসিন্দারা।


এদিকে পাওয়ার স্টেশন বন্ধের কারণ ও চালু হওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারছেন না সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ও কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতরা।

এ ব্যাপারে সহকারী প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ আচার্য জানান, কুমারগাওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। পাওয়ার স্টেশনে ওইরকম কোনো সমস্যা নেই। কবে এই পাওয়ার স্টেশন চালু হবে-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটাতো অন্য ডিপার্টমেন্টের, একটু জেনে জানাতে হবে। '

বিউবো'র সূত্রে জানা যায়, সিলেট মহানগরীতে পাঁচটি ডিভিশনে ১৩টি সাবস্টেশন আছে। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে বর্তমানে সমস্যা বেশি হচ্ছে। ফিউজ ছিঁড়ে যাওয়া, তার ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উপর কুমারগাওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে প্রায় ১০দিন। এর পর থেকেই সিলেটে লোডশেডিং বেড়ে গেছে এবং ভোল্টেজও কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না সিলেটে।

বিউবো সিলেট বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন বলেন, ‘পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় আমাদের কিছু এলাকায় লোডশেডিং করতে হয়। তার উপর আবার ঢাকা থেকে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ। পুরো সিস্টেমে ফিকুয়েন্সি ডাউন হয়ে গেলে ঢাকা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই মানুষজন বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। অনেক গ্রাহক কল করে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করেন। কিন্তু এই লোডশেডিংয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। তারপরও গ্রাহকরা আমাদের উপরই ক্ষোভ ঝাড়েন।

এ বিষয়ে বাংলাবাজার পত্রিকার সাথে কথা বলেন সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ আব্দুল কাদের। তিনি জানান, ‘সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় কুমারগাও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। এই কুমারগাঁও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ। এই উৎপাদন কেন্দ্রের  ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে প্রায় ১০দিন। এটা বন্ধ থাকার কারণে ভোল্টেজও কম হচ্ছে। এবং সিলেটের লোডশেডিংও বেড়ে গেছে। আমরা এখন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ আনছি। আমাদের নিজস্ব জেনারেশন সিলেটে আর নেই। এটা চালু হলে সিলেটের লোডশেডিং কমবে। লো ভোল্টেজের সমস্যাও সমাধান হবে। ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে তাই বলা যাচ্ছে না কতদিনের ভেতর ঠিক হবে। কারণ এটার যন্ত্রপাতি বাইরে থেকে আনা হয়। তাছাড়া সিলেটে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি)। 

বৃহস্পতিবারেও প্রায় ৩৩ শতাংশ লোডশেডিং ছিল সিলেটে। এই লোডশেডিং কমাতে হলে আমাদের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হবে এবং কুমারগাওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু করতে হবে। কিন্তু ওই উৎপাদন কেন্দ্র আমাদের আওতাধীন না। তাই সেটা কবে নাগাদ চালু হবে তা বলতে পারছি না।"