গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: আরও দুইজন গ্রেপ্তার, মোট গ্রেপ্তার ৭

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:১৪ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৪:৪২ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহীনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮ ঘন্টার মধ্যেই প্রধান আসামীসহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে তাদেরকে রাজধানীর তুরাগ থানা, ময়মনসিংেহের গফরগাঁও এবং গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে প্রধান আসামী মিজান ওরফে কেটু মিজান, তাঁর স্ত্রী গোলাপি, স্বাধীন, আলাআমিন, পাবনার চাটমোহর উপজেলার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিন হাসানের ছেলে ফয়সাল হাসান (২৩) এবং কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কাশিপুর (অনন্তপুর) গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহ জালাল (৩২)। তাদের মধ্যে মিজান ওরফে কেটু মিজান মহানগরীর বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার মঞ্জু মিয়ার বাড়ীতে ভাড়া বাসায় বসবাস করে। গ্রেফতারকৃতরা ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: সাদাপাথর খেকুরা শনাক্ত, শীঘ্রই আইনি ব্যবস্থা

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ঘটনার শুরুতে ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে যাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা তিনি হলেন প্রধান আাসামীর স্ত্রী গোলাপি। এছাড়া ফুটেজে চাপাতি হাতে (দাড়িওয়ালা এবং মাথায় ক্যাপ পড়া) কোপানোর জন্য যাকে দৌড়াতে দেখা যায় সে ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান। সাদা সার্ট ও জিনসের প্যান্ট পড়া চাপাতি হাতে দাঁড়ানো স্বাধীন। অপর আসামীর নাম আল আমিন। আসামী সুমনের কাছে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি এবং সুইস গিয়ার পাওয়া গেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যাকান্ডের পরপরই স্থানীয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাঁদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক দল ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় অভিযানে শুরু করে। শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) গোয়েন্দা (দক্ষিণ) গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে প্রধান আসামী মিজান ওরফে কেটু মিজান ও তাঁর স্ত্রী গোলাপিকে গ্রেফতার করে। হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া আলামিনকে মহানগরীর বাসন থানা পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন: সাভারে পাচারকালে পিকআপসহ সাড়ে ৬ লাখ টাকার টিসিবি’র পণ্য জব্দ, আটক-১

স্বাধীনকে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। র‌্যাব গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) কে. এম. এ. মামুন খান চিশতী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্কমর্তা (ওসি) শাহীন খান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই সেলিম। গ্রেফতারকৃতরা সবাই ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। ঘটনার পর রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা স্থানীয়ভাবে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬ টা ৫৮ মিনিটে মহানগরীর চান্দানা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ’র গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তুহিন গাজীপুর মহানগরীর পালের মাঠ এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার দুই ছেলে তৌকির হোসেন তৈকি (৫) ও আবদুল্লাহ আল ফাহিম (৩)। সে সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি ইউনানী ওষুধ কোম্পানীর গাজীপুরের ডিলার ছিলেন। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে নিহত সাংবাদিকের বড় ভাই সেলিম অজ্ঞাতদের আসামী করে বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেমে এসেছিল শোক ও ক্ষোভের ছায়া। দ্রুত বিচার ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবি উঠেছে সর্বস্তর থেকে।