মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হচ্ছে আগামী বাজেটে

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে দেশের অভ্যন্তরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি।
এত কিছুর পরও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৭ শতাংশ ধরতে যাচ্ছে সরকার। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমিয়ে ৭ শতাংশের নিচে ধরা হতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রথম ১০ দিনে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করলেন ৯৬ হাজারের বেশি করদাতা
মূল্যস্ফীতি ছাড়াও সরকারের বড় চিন্তার বিষয় ডলারসংকট তথা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ডলারসংকট মোকাবেলার প্রধান দুই সূচক রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সেও কোনো সুখবর নেই। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাধ্য হয়েই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা চেয়ে চিঠি দিচ্ছেন। এ ছাড়া সরকারের আয়ের প্রধান খাত রাজস্ব আয়েও ঘাটতি রয়েছে। সব মিলিয়ে কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।
এমন কঠিন সময় অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা নিয়ে করণীয় ঠিক করতে আগামী ২২ ডিসেম্বর ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের’ বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী। ওই দিন ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি’র বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের খসড়া রূপরেখা তৈরি করা হবে। আগামী অর্থবছরে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রেখে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায় তার হিসাব কষবেন অর্থমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন: পাম অয়েলের দাম লিটারে কমলো ১৯ টাকা
সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে আগামী অর্থবছর বাড়তি আমদানি মিটিয়ে মূল্যস্ফীতি কিভাবে সহনীয় রাখা হবে তা নিয়ে নানা ছক কষছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আগামী ২২ ডিসেম্বর কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের যে বৈঠক হবে সেখানে প্রাথমিকভাবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আগামী অর্থবছর আন্তর্জাতিক পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে এমন চিন্তা করেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন অর্থমন্ত্রী।
তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে সামান্যই। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৮৫ শতাংশে। অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৯১ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে ছিল ৯.১০ শতাংশ। গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৫২ শতাংশ, যা ১১ বছর তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসেই মানুষকে চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপণ্যই বেশি দামে কিনে খেতে হচ্ছে। গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতি কখনো ৬.৪৪ শতাংশের বেশি যায়নি।
মূল্যস্ফীতির বিপরীতে সর্বশেষ নভেম্বরে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৯৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৬.৯১ শতাংশ। এর অর্থ, দৈনিক আয়ের মানুষ বাড়তি আয় দিয়ে বাজার থেকে আগের মতো পণ্য ও সেবা কিনতে পারছে না। কারণ মজুরি বা বেতন বাড়লেও মূল্যস্ফীতি তা খেয়ে ফেলছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা কিছুটা কমিয়ে ৭ শতাংশ ধরার প্রস্তাব করতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এ ক্ষেত্রেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ প্রস্তাব বহাল থাকলে তা কতটুকু অর্জনযোগ্য হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সূত্র: কালের কন্ঠ