দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে
গাজার দক্ষিণে ফিলিস্তিনিদের কানে ফিরছে শান্তির শব্দ

দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে গাজার দক্ষিণে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনিরা শান্তির শব্দ চিনতে পারছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পর গাজায় নেমে এসেছে এক অচেনা নীরবতা।
খান ইউনুসের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসিতে এখন বাতাসে শুধু সমুদ্রের শব্দ ও শিশুর কান্না—যুদ্ধবিমান, ড্রোন বা কামানের গর্জন নেই।
আরও পড়ুন: অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন যে তিন জন
২৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মা, উইয়াম আল-মাসরি বলেন, অবশেষে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, যুদ্ধের শব্দে আর তা ঢেকে যাচ্ছে না। এই নীরবতা কেবল তারাই বোঝে, যারা দুই বছর মৃত্যুর গর্জন শুনে বেঁচে আছে।
উইয়াম ও তার পরিবার পাঁচ মাস ধরে একটি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন। গাজা সিটির বাড়িটি ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়, বিয়ের মাত্র ছয় মাস পর।
আরও পড়ুন: গাজায় আটক আরও ১৩ জিম্মিকে রেডক্রসের হাতে তুলে দিল হামাস
তিনি বলেন, আমার ছেলে সামিহের কান্নার শব্দ শুনে এখন শান্তি পাই। আগে ড্রোনের শব্দে কিছুই শোনা যেত না। বিশেষ করে ‘আল-জানানা’—ওই ক্রমাগত গুঞ্জন করা নজরদারি ড্রোনগুলো আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিত।
মৃত্যুর শব্দের পর এখন জীবনের শব্দ
আল-মাওয়াসির আরেক বাসিন্দা, ৭৩ বছর বয়সী আহমেদ আল-হিসি বলেন, আমরা এতদিন মৃত্যুর শব্দের সঙ্গে বেঁচেছি—এখন শান্তির শব্দ চিনতে শিখছি।
তার ছেলে খালেদ ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হামলায় নিহত হন, কয়েকদিন পর বোমা হামলায় নিহত হন পুত্রবধূ। এখন তিনি তাঁদের তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকেন।
আহমেদ বলেন, শব্দ মানেই এখানে জীবন বা মৃত্যু। এখনো আমার নাতিরা হঠাৎ শব্দে কেঁপে ওঠে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, গাজার মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর শব্দ থেকে জীবনের শব্দে ফিরছে।
খালি হাঁড়ির শব্দ এখনো সবচেয়ে কষ্টের
উত্তর আল-মাওয়াসির তাবু শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক তাওফিক আল-নাজিলি বলেন, “যখন হাঁড়ির নিচে খাবার ফুরিয়ে যায়, সেই শব্দও আমাদের জন্য বোমার মতো কষ্টদায়ক। এটা ক্ষুধার শব্দ।
তিনি বলেন, যুদ্ধ আমাদের শুধু ভয়াবহ শব্দ নয়, ক্ষুধা ও হতাশার শব্দও শোনিয়েছে। আমি চাই না আর কখনো সেই শব্দ শুনতে হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
চুক্তির পর থেকে গাজায় আকাশ হামলা কমেছে, তবে কিছু স্থানে ইসরায়েলি হামলায় বৃহস্পতিবার অন্তত ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবুও দীর্ঘ সময় পর মানুষ কিছুটা শান্তি অনুভব করছে।
উইয়াম আল-মাসরি বলেন, এই বিরতি স্থায়ী না হলেও, অন্তত আজ আমরা একে অপরের কথা শুনতে পারছি। এটাই অনেক বড় শান্তি।