বাংলাদেশে এলপিজি আনা জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিতে সহায়তা করার অভিযোগে ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশে এলপিজি নিয়ে আসা সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি নেটওয়ার্ক এবং জাহাজও।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মার্কিন অর্থ বিভাগের অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুন: অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন যে তিন জন
ওএফএসি’র বিবৃতিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত জাহাজ ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের এলপিজির দুটি চালান বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে। পাশাপাশি চলমান আরও কিছু চালান পরিবহনের বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই চক্রের মাধ্যমে ইরান বিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানি করছে, যা দেশটির সরকারের বড় রাজস্ব উৎসে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় আটক আরও ১৩ জিম্মিকে রেডক্রসের হাতে তুলে দিল হামাস
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের জ্বালানি রপ্তানি কার্যক্রমকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের নীতির ধারাবাহিক অংশ।
নতুন নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান—স্লোগাল এনার্জি ডিএমসিসি এবং মারকান হোয়াইট ট্রেডিং ক্রুড অয়েল অ্যাবরোড কোম্পানি এলএলসি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানি এলপিজি সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে।
ওএফএসি জানিয়েছে, এদের মাধ্যমে একাধিক চালান বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে।
মার্কিন অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘গ্যাস ডিওর’ বাংলাদেশে ১৭ হাজার টনেরও বেশি ইরানি এলপিজি সরবরাহ করে।
এছাড়া ২০২৪ সালের শেষ দিকে কোমোরোসের পতাকাবাহী জাহাজ ‘আদা’ (আগের নাম ক্যাপ্টেন নিকোলাস) বাংলাদেশের কিছু আমদানিকারকের কাছে ইরানি এলপিজি সরবরাহ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সি শিপ ম্যানেজমেন্ট এলএলসি-এর মালিকানাধীন এই জাহাজকেও সর্বশেষ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ জাহাজে আগুন লাগে। প্রায় ৩৪ হাজার টন এলপিজি বহনকারী জাহাজটি আইনি জটিলতায় কয়েক মাস আটকে থাকার পর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি পায়। ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি এখনো চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা রয়েছে।
যদিও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থা নেই, তবে এই চালানগুলোর উল্লেখের কারণে বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির আওতায় এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন আইন অনুযায়ী, নিষিদ্ধ লেনদেনে যুক্ত থাকা বিদেশি কোম্পানিগুলো সেকেন্ডারি স্যাংশন-এর ঝুঁকিতে পড়ে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারানোর মতো গুরুতর পরিণতি ঘটতে পারে।