ইসরায়েলি সংসদে পশ্চিম তীর দখলে বিলের প্রাথমিক অনুমোদন

ইসরায়েলি সংসদ নেসেটে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব আরোপের প্রস্তাবিত বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি কার্যত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্তির সমান।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আরও পড়ুন: পশ্চিম তীর দখলের পদক্ষেপ ‘শান্তিচুক্তি হুমকির মুখে’: মার্কো রুবিও
১২০ সদস্যের সংসদে ২৫-২৪ ভোটে বিলটি অনুমোদিত হয়। এটি পাস হতে আরও তিন দফা ভোটের প্রয়োজন হবে। সংসদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিলটি জুডিয়া ও সামারিয়া (পশ্চিম তীর) অঞ্চলে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব আরোপের জন্য প্রাথমিকভাবে গৃহীত হয়েছে। এখন এটি পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে পাঠানো হবে আলোচনার জন্য।
বিলটি পাস হয় এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফরে রয়েছেন গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি জোরদার করার লক্ষ্যে।
আরও পড়ুন: ইরানে রাজনৈতিক কোন্দল ও নিষেধাজ্ঞার চাপে অস্থিরতা, যুদ্ধের আশঙ্কা
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার লিকুদ দল এই বিলের বিরোধিতা করলেও, তার জোটের চরম ডানপন্থী মন্ত্রীরা যেমন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইটামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এতে সমর্থন দেন।
স্মোটরিচ এক্স (পূর্বে টুইটার) পোস্টে বলেন, সময়ের দাবি হলো — আমাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার, জুডিয়া ও সামারিয়ার ওপর পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
বিলটি এনেছিলেন চরম ডানপন্থী নোয়াম দলের নেতা আভি মাওজ, যিনি সরকারের অংশ নন।
বেশিরভাগ লিকুদ সদস্য ভোটে অংশ নেননি, তবে দলের প্রবীণ নেতা ইউলি এডেলস্টেইন নেতানিয়াহুর অবস্থানের বিরোধিতা করে বিলের পক্ষে ভোট দেন এবং তিনিই হয়ে ওঠেন ‘ডিসাইডিং ভোটার’।
অন্যদিকে, বিরোধী দলের একটি বিলও গৃহীত হয়েছে, যেখানে মাআলে আদুমিম বসতি সংযুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। আগস্টে ইসরায়েল এই বসতির সম্প্রসারণ অনুমোদন দেয়, যা আন্তর্জাতিক মহলের মতে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা নষ্ট করবে।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হামাস, কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান একযোগে এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পশ্চিম তীরসহ জেরুজালেম ও গাজা এক অখণ্ড ভূখণ্ড, যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।
হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, দখলদার শক্তির এই উন্মত্ত সংযুক্তি প্রচেষ্টা অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য।
কাতার বলেছে, এটি “ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের ওপর প্রকাশ্য আঘাত” এবং আন্তর্জাতিক আইনের চ্যালেঞ্জ।
সৌদি আরবও তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানায়, “এই পদক্ষেপ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে বিপন্ন করছে।”
জাতিসংঘের প্রধান বিচারিক সংস্থা গত বছর বলেছিল, পশ্চিম তীরসহ দখলকৃত সব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি অবৈধ এবং দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত। বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ৭ লাখের বেশি ইসরায়েলি অবৈধভাবে বসবাস করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, এই ভোট মূলত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সংসদের প্রতীকী প্রতিবাদ। এটি প্রকৃত নীতিগত পরিবর্তনের চেয়ে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার অংশ।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যারা ট্রাম্পের আমলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, আগেই সতর্ক করেছিল — পশ্চিম তীর সংযুক্তির যে কোনো পদক্ষেপ তাদের জন্য ‘রেড লাইন’।