অপসারণ চেয়ে রিট খারিজ হাইকোর্টে

হঠাৎ আইজিপি অপসারণ আন্দোলনে উস্কানিদাতা কারা

Any Akter
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩:৩৯ অপরাহ্ন, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৩:৪৭ অপরাহ্ন, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তে হঠাৎ করে পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম কে অপসারণের দাবিতে একটি মহল রাজপথে আন্দোলন ও উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে।  হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি শেষে খারিজ করে দিয়েছে। রিট করার আগে একাধিক আইনজীবী সরকার কে আল্টিমেটাম দিয়ে লিগাল নোটিশ দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে হঠাৎ করে নির্বাচন সংক্রান্ত পূর্ণ বিষয় ছাড়া অন্য একটি স্পর্শকাতর ইস্যুকে সামনে নিয়ে কেন আইজিপির বিরুদ্ধে এ ধরনের ভূমিকা। এই আন্দোলনে কারা উস্কানি ও অর্থায়ন করছে উচ্চ আদালতের মামলায়।

আদালত, আন্দোলনকারী গোষ্ঠী সূত্র জানায়

আরও পড়ুন: সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে আদালতে প্রেরণ

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে ইনকোয়ারি প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ড পরবর্তী পেশাল বাঞ্চের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ইন্দন রয়েছে। বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের পরপরই মামলায় আটক করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টু কে। এ মামলার আসামিও করা হয় তাকে। পরবর্তীতে রাজশাহী কারাগারে মৃত্যু হয় বিএনপি নেতা পিন্টুর। এই বিষয়টি উদঘাটনের জন্য পিবিআই তদন্ত করছে। স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে সাবেক ৫ পুলিশ কর্মকর্তা নাম আসে বিভিন্ন ভূমিকার কারণে। তৎকালীন সময়ে স্পেশাল বাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন  বাহারুল আলম।  এ অভিযোগে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের অপসারণ ও আন্দোলন শুরু করে পিন্টু স্মৃতি সংসদ। অপরদিকে অপসারণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশের পর হাইকোর্টের রিড করা হয়। সোমবার সনে শেষে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।  বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিটকারী আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় রিট আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ, ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

এর আগে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়ীদের তালিকায় নাম আসায় বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের অপসরাণ চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। ন্যাশনাল লইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু এ রিট দায়ের করেন।

আরও পড়ুন: আইজিপি অপসারণে হাইকোর্টে আইনজীবীর রিট খারিজ

গত ৬ ডিসেম্বর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে  নাম আসায় খবরে বাহারুল আলমকে বরখাস্ত করতে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। ন্যাশনাল লইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ চিঠি পাঠান।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের এক করুণতম অধ্যায় ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড, যেখানে দেশের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ অসংখ্য সদস্য নির্মমভাবে শহিদ হন, এখনও জাতীয় বেদনা ও বিচার প্রত্যাশার এক অমলিন স্মৃতি হয়ে আছে। সম্প্রতি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের দাখিলকৃত রিপোর্টে বর্তমান বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. বাহারুল আলমের নাম উত্থাপিত হওয়ায় দেশের ন্যায়বিচার, জনআস্থা এবং বিচারপ্রতিষ্ঠার প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনরত একজন কর্মকর্তার নাম এমন একটি রাষ্ট্রদ্রোহী ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উল্লেখ হওয়ার ঘটনাটিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুতর করে তুলেছে। 

চিঠিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, দুর্নীতি-দমন এবং রাষ্ট্রের আস্থা পুনঃনির্মাণ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্টে নাম আসা সত্ত্বেও তার দায়িত্বে বহাল থাকা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থার ওপর জনমনে সন্দেহ তৈরি করছে। ন্যায়বিচারের স্বীকৃতি শুধু আদালতের রায়ে নয়, বরং সরকারের যথাযথ পদক্ষেপে প্রতিফলিত হওয়া জরুরি। অতএব, দেশের স্বার্থ, 

বিচারব্যবস্থার মর্যাদা এবং ভবিষ্যতের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা রক্ষার্থে আমি ও আমরা ন্যাশনাল লইয়ার্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে প্রার্থনা করছি যে—

১) ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত রিপোর্টে নাম আসায় বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমকে অবিলম্বে আইজিপি পদ থেকে অব্যাহতি বা বরখাস্ত করার নির্দেশ প্রদান করা হোক।

২) মামলার পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার ও তদন্তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার ভূমিকা ও দায় নির্ণয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

৩) স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে সরকারের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি, যাতে রাষ্ট্র ও জনগণ উভয় ন্যায়বিচারের বাস্তব প্রতিফলন অনুভব করতে পারে।

রিট দায়ের এর পাশাপাশি নাসির উদ্দিন পিন্টু স্মৃতি সংসদ গঠন করে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে উসকে দেয়া হয় আইজিপি অপসারণ আন্দোলনে। তারা সভা সমাবেশ এমনকি পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাও করে একাধিকবার আল্টিমেটাম দেয়। তাদের মাঝে উস্কানিমূলকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে আইজিপি পদে থাকলে  মৃত্যুর রহস্য উদঘাটিত হবে না। কারাগারে মৃত্যুর পর ওই সময়ের দায়িত্ব পালন করা কারা কর্মকর্তাদের অনেকেই অবসরে চলে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ঢাকা ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়া নাসির উদ্দিন পিন্টুর স্ত্রীকেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে আন্দোলনের যুক্ত করা হয়।

পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে ও বিএনপি'র পক্ষ থেকে বিষয়টিতে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ করে হঠাৎই আন্দোলনের পেছনে অনেক রহস্য বেরিয়ে আসে। আইজিপি অপসারণর আন্দোলনে একটি মহল এক ডিলে তিন পাখি মারতে চেয়েছিল। আন্দোলনের নেতৃত্ববাদের সাথে আলোচনা করার পর  কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীদের কেউ এই বিষয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে কিছু না বললেও জানান আইজিপির অপসারণ মূল বিষয় নয় পিন্টুকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় আটক ও হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের অবশ্যই আমরা বিচার চাই। এদিকে এই আন্দোলন ও রিট বাইরের বিষয়ে অনেক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে।

 একটি স্পর্শকাতর মামলার ইনকোয়ারি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে, তা বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে একজন সাংবাদিক বিষয়টি উত্থাপন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেপটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এটি পুরোপুরি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র অপচর বলে জানান। একই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়িত্বে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি খোদা বক্স চৌধুরী জানান প্রতিবেদনে তাদের দায়ী করেছে এই রিপোর্ট কোথায় পেলেন। সরকারের কাছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সরকার এখনো সেটি প্রকাশ করেনি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবেদনটি আলোচনা করে এটি সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। এই অভিযোগ সঠিক নয়। এগুলো এক ধরনের গুজব উস্কানি।

আইনজীবী জুলফিকার আলী জুনুর দায়ের করা হাইকোর্টের একটি রিট এবং এর আগে তিন আইনজীবীর পক্ষ থেকে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশকে প্রশাসনের একটি অংশ ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত উদ্যোগ হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, দীর্ঘ সময় পর একটি নিষ্পত্তিপ্রাপ্ত ও ভিন্ন কাঠামোর তদন্তপ্রক্রিয়ায় সম্পন্ন ঘটনা টেনে এনে বর্তমান আইজিপিকে দায়ী করার চেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত ও বিচার সম্পূর্ণভাবে বিডিআরের নিজস্ব আইন, রুলস ও বিধিমালার আওতায় পরিচালিত হওয়ার কথা। ঘটনার সময় তৎকালীন সরকার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল। এমনকি সেনাবাহিনীর প্রধানও পিলখানায় সরাসরি সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারেননি।

এই প্রেক্ষাপটে তৎকালীন পুলিশের বিশেষ শাখার একজন ডিআইজি হিসেবে বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় চাপানোকে৷ প্রশাসনের ভাষায় ‘উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো’র শামিল বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সামরিক বাহিনী ও বিডিআরের মতো আধা-সামরিক বাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, যারা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে নিয়োজিত। এসব সংস্থা নিয়মিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য সরবরাহ করে থাকে। ফলে বিডিআরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) হস্তক্ষেপ করে না। এ কারণে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় পুলিশের বিশেষ শাখার ওপর আরোপ করার সুযোগ নেই বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, ঘটনার প্রায় ১৬ বছর পর এসে শুধুমাত্র বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমকে লক্ষ্য করে পদত্যাগের দাবি তোলা পুলিশের শীর্ষ নেতৃত্বকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বাহারুল আলম সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সুপরিচিত। প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, তিনি সবসময় জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলে স্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশ বাহিনীতে একাধিক সংস্কারমূলক ও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে তার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ছিল বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি এবং সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে তার পরিচ্ছন্ন ও সৎ ভাবমূর্তি রয়েছে।

প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন সফল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুরনো বিষয় টেনে এনে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশের কিছু সাবেক বর্তমান কর্মকর্তা কিছু ঠিকাদার এই উস্কানি পিছনে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।