একের পর এক সম্পদের খোঁজ মিলছে মতিউরের

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ন, ২৮ জুন ২০২৪ | আপডেট: ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, ২৮ জুন ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমানের একের পর এক অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলছে। এবার গাজীপুরেও তার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অধিকাংশ সম্পত্তি পুবাইল থানার খিলগাঁও মৌজায় অবস্থিত। জমি দখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ করা হয়নি উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের হিসাব

মতিউরের ভাইয়ের বিশাল কারখানা নিয়েও উঠছে নানা কথা। এরই মধ্যে অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের কমিটি।

খিলগাঁও মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। এখানেই আছে মতিউরের পরিবারের আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট নামের রিসোর্ট। স্থানীয় সূত্র জানায়, ৬০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা এই রিসোর্টের ৩৫ বিঘার মালিক তিনি ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

আপন ভুবনের নামে ৫ একর ৭৭৭ শতাংশ জমি নামজারি ও জমাভাগ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজের অনেক আগে থেকে টঙ্গীতে যাতায়াত ছিল। পুবাইলের খিলগাঁওয়ের আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তাদের সখ্য হয়। সেই সূত্রে আমিনুলের বাড়ির আশপাশে তাদের নামে ৩৫ বিঘা জমি কেনেন। পরে আরও কিছু জমি কেনা হয়। এর সঙ্গে স্থানীয়দের কাছ থেকে আরও জমি বার্ষিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে ‘আপন ভুবন’ করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পিকনিক স্পটের কারণে আটকে গেছে বৃষ্টির পানি প্রবাহ। এ নিয়ে কিছু বলতে গেলে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতো মতিউরের লোকজন।

স্থানীয় ভূমি অফিসের তথ্য অনুসারে এখানে গাজীপুরে মতিউর-লাকি দম্পতি ও তাদের ছেলে অর্ণব ও মেয়ে ইপ্সিতার নামে কয়েক বিঘা জমি আছে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খিলগাঁও মৌজায় ৩৬৫৬ নম্বর জোত নম্বরে মতিউর রহমানের নামে ২৭ শতাংশ এবং ৪২৪৯ নম্বর জোতে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ জমি নামজারি করা হয়েছে। একই মৌজায় তাঁর স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ৩৪৫০ নম্বর জোতে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি খারিজ করা হয়েছে।

খিলগাঁও মৌজাতেই মতিউর-লায়লা দম্পতির ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ৩৬৪৮ নম্বর জোতে ১৯ শতাংশ, ৪৪১৫ নম্বর জোতে ৭.২২ শতাংশ, ৪৪১৬ নম্বর জোতে ৫৫ শতাংশ, ৩৯৫০ নম্বর জোতে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি নামজারি ও জমাভাগ করা হয়েছে। একই মৌজায় মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে ৩৯২৫ নম্বর জোতে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩৬৪৫ নম্বর জোতে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি খারিজ করা হয়েছে। এই চারজনের যৌথ নামে ৩৫৫৭ নম্বর জোতে ৪৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং প্রথম স্ত্রী ও অর্ণবের নামে ৩৬৫২ নম্বর জোতে ৪৫ শতাংশ জমি নামজারি ও জমাভাগ করা রয়েছে।

লায়লা কানিজের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, এসব জমি মতিউরের পরিবারের দখলে রয়েছে। খিলগাঁও মৌজাতেই গ্লোবাল শুজের নামে ২১, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৯১, ৯২, ১১৪, ১২০, ১২১, ১২২, ১২৩ ও ১২৪ নম্বর জোতে শিল্প খারিজ করে জমাভাগ করা ৬৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এই গ্লোবাল শুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাইয়ুম হাওলাদার মতিউর রহমানের ভাই। ময়মনসিংহের ভালুকায় এই প্রতিষ্ঠানের বিশাল কারখানা রয়েছে।

এ ছাড়া লায়লা কানিজের নামে-বেনামে গাজীপুরে পাঁচ কাঠা, পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে টঙ্গীতে মতিউরের ভাইয়েরও রয়েছে এসকে ট্রিমস নামের একটি বিশাল কারখানা। সেটি নিয়েও উঠছে নানা কথা। দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে এরই মধ্যে তিন সদস্যের কমিটি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ পরিস্থিতিতে গা ঢাকা দিয়েছেন মতিউর রহমান। এছাড়া দেশ ছেড়েছেন মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীও তার সন্তানরা।