আন্দোলনে হতাহত শতাধিক শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করছে ইউনিসেফ

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংগঠিত মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিবেদনকে ‘হৃদয়বিদারক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এর প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি একথা জানান। তিনি বলেন, তারা নিহত বা আহত শিশুদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে ১হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে শতাধিক শিশু ছিল। আমরা সবার জন্য শোক জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: সিএমপির সাংবাদিক নির্যাতন: ঘুসি আকবরের পর ডিসি আমিরুল
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সময়কালে সহিংসতা, শারীরিক আক্রমণ এবং ধর্ষণের হুমকি রেকর্ড করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা। এই সহিংসতার শিকার শুধু নারী নয়, শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি।
তিনি যোগ করেন, অনেক শিশুকে হত্যা, পঙ্গু, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিকভাবে আটক এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ধানমন্ডিতে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী ২০০টি ধাতব গুলির আঘাতে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যায়। নারায়ণগঞ্জে আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যে ৬ বছর বয়সী এক কিশোরী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়, যখন সে ছাদ থেকে সংঘর্ষ দেখছিল।
আরও পড়ুন: ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফ প্রতিনিধি বলেন, পাঁচ আগস্ট, বিক্ষোভের সবচেয়ে মারাত্মক দিনগুলোর মধ্যে একটি। আজমপুরে একটি ১২ বছর বয়সী বালক কমপক্ষে এক ডজন মৃতদেহের সাক্ষী। সে ‘বৃষ্টির মতো’ পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই ঘটনাগুলো অবশ্যই আমাদের সকলকে আতঙ্কিত করে তুলবে এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে ‘আর কখনো হবে না’ তা নিশ্চিত করার জন্য দেশটির কাছে আবেদন করছে।
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সমস্ত নীতিনির্ধারক, রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মকর্তাদের দেশটির শিশু, যুবক এবং পরিবারগুলোকে সুস্থ ও আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করার জন্য তিনটি মূল দিক নিয়ে জরুরিভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
প্রথমত, সেসব শিশুর জন্য জবাবদিহিতা, যাদের জীবন হারিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আসুন আমরা ন্যায়বিচারের জন্য আহ্বান জানাই, যারা আটক রয়ে গেছে বা যারা অন্যভাবে এই ঘটনাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে তাদের সমর্থন এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, সব রাজনৈতিক দল নেতা এবং নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়ে পুলিশ বিভাগ এবং বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো। যেন বাংলাদেশের কোনো শিশু আর কখনও নির্বিচারে আটক, নির্যাতন বা সহিংসতার সম্মুখীন না হয়।
তিনি জানান, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায়- সহিংসতা, অপব্যবহার, এবং শিশুদের বেআইনি আটকের সমস্ত ঘটনা স্বাধীন তদন্ত করতে হবে। বিচার খাতের সংস্কার করতে হবে, যা শিশু সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের আইনি কাঠামোকে সারিবদ্ধ করে। ভবিষ্যৎ আইনের লঙ্ঘন প্রতিরোধ করার জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা, যার মধ্যে স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।