দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস, পিওকে তলব করেছে দুদক

অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) তুহিন ফারাবি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাবেক যুগ্ম সদস্যসচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: সিএমপির সাংবাদিক নির্যাতন: ঘুসি আকবরের পর ডিসি আমিরুল
সাংবাদিকদের দুদক মহাপরিচালক বলেন, তুহিন ফারাবি এবং মাহমুদুল হাসানকে ২০ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। এছাড়া গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরকে ২১ মে এবং মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২২ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল উপদেষ্টাদের এপিএস ও পিওর দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করার দাবি নিয়ে দুদকে আসে যুব অধিকার পরিষদ। মার্চ টু দুদক কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা দুদকে আসেন। পরে দলটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল দুদকে স্মারকলিপি জমা দেয়।
আরও পড়ুন: ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা
এ ছাড়া হাইকোর্টের দুই আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাদিম মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ দুদকে দাখিল করেন।
গত ২২ এপ্রিল জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যদিও উপদেষ্টা নিজেই তাকে ৮ এপ্রিল অব্যাহতির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পিও তুহিন ফারাবিকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গত ২১ এপ্রিল এনসিপি থেকে গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এনসিটিবির পাঠ্যবই ছাপানোর কাগজ কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে তার নাম উঠে আসে।
এর পরে ২৫ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে দুদককে তদন্ত করার অনুরোধ জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, তুহিন ফারাবির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানান অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এরই মধ্যে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান দল এসব অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথি সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অধিযাচন পত্র পাঠান। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে, বিভিন্ন দপ্তরে চাহদাপত্র দিয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।
তিনি আরও বলেন, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির বাণিজ্যসহ নানান অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। তার বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারের দুই উপদেষ্টার এপিএস, পিও এবং এনসিপি নেতার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি জানার দাবি নিয়ে দুদক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। দুপুর ২টার দিকে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
পরে সংগঠনের দুই নেতা দুদক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তারা দুর্নীতি অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানতে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন।
সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দুদক উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে এই তদন্তের বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা হতে পারে। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদক কর্তৃক মামলা দায়ের, গ্রেফতারপূর্বক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের আহ্বান করা হচ্ছে।