নিবেদিত প্রাণ কর্মী হলেও দায় নিবে না দল

অপকর্মের বিরুদ্ধে আরও কঠোর বিএনপি

Sanchoy Biswas
রাশেদুল হক
প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ন, ০৪ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৮:০৫ পূর্বাহ্ন, ১২ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কোন অপকর্ম  বা অনাচারে লিপ্ত হলে তার দায় নিবে না বিএনপি। দলের দুর্দিনে যত অবদানই রাখুক বহিষ্কারের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি তার সাথে সাংগঠনিক ও সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিএনপি নেতা কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যে কোন মূল্যে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে দলের ইমেজ ধরে রাখতে চায় বিএনপি। মূলদলসহ প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে ইমেজ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরনের কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।  গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ জনতা নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। এই সুযোগে অভিযোগ আছে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা কর্মীরাও চাঁদাবাজির দখলবাজিসহ মাদককাণ্ডে জড়িত থাকার। প্রথমে সতর্ক পরে দলের সদস্য স্থগিত  বহিষ্কার সর্বশেষ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে দলটি। বিএনপি নেতা কর্মীরা অপকর্মে জড়ালে হাই কমান্ড থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সর্বশেষ রাজধানীর বনানীর জাকারিয়ার ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে মদ খেয়ে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় বনানী থানা যুবদল সভাপতি মনির হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বনানী থানার ওসি রাসেল শেখ জানান, জাকারিয়া হোটেলের ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে বনানী থানায় যুবদল বহিষ্কৃত নেতা মনির হোসেনসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামি মনিরসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করতে  একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেছে। ভাঙচুরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মবকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএনপি নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ মহল বিএনপির নাম ব্যবহার করে দখল চাঁদাবাজি ও মবকাণ্ড করে পরিকল্পিত অস্থিরতা তৈরি করছে মর্মে বিএনপির হাই কমান্ড অবহিত আছেন। এছাড়াও নানা অপকর্মে জড়িয়ে যাওয়ায় বিগত ১০ মাসে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৪ হাজার নেতা কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কারও কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

দলের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা অসদাচরণ করলে কেউ রেহাই পাবে না- এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানান দিতে চাই, দলের নামে যে কেউ যে কোনো ধরনের অনৈতিক, অবৈধ, সন্ত্রাসী, সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করবে, সে রেহাই পাবে না।’ 

আরও পড়ুন: নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায় নেবো: ধর্ম উপদেষ্টা

তিনি বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক একটা তদন্ত করে এবং ভিডিও-অডিও সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় যে সে দায়ী, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করিনি, করছি না।’

গতকাল ঢাকার নয়া পল্টনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে এখন পর্যন্ত কার কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তার বিস্তারিত তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।

আরও পড়ুন: বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ করা হয়নি উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের হিসাব

সাংবাদিকদের রিজভী বলেন, এ বিষয়টি আপনাদের সামনে এজন্য আমরা উপস্থাপন করলাম। আমরা তো প্রতিদিনই এটা করি, তারপরেও আপনাদের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া যে, আর কেউ যেন সাহস না পায়। 

তিনি বলেন, দলের অভ্যন্তরে অথবা প্রতিবেশী কারো সঙ্গে অথবা অন্য যেকোনো মানুষের সঙ্গে কোনো ধরনের সহিংস্র আচরণ করবে, সন্ত্রাসীমূলক আচরণ করবে, সে রেহাই পাবে না।

এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তা তুলে ধরে রিজভী।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মশাল মিছিল, ভাঙচুর, নিজ দলের কর্মীদের আঘাত করা ইত্যাদি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানতে পেরে তদন্ত করে চিলমারী উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সাঈদ হোসেন পাখি ও সদস্য আবদুল মতির শিরিনের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।’

রিজভী বলেন, ‘কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার কোতোয়ালী মডেল থানার পাছথুবী ইউনিয়নের (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক খোকন মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ দলের নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অস্ত্রবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার সেসব ছবিও পাওয়া গেছে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হাওলাদারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কয়েকজন দুষ্কৃতকারীকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের মহিলা দলের একজন নেত্রী, যিনি চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভানেত্রী, তাকে মারধর করেছে। এটা কতবড় অনৈতিক কাপুরুষোচিত কাজ, তাকে (খোকন মিয়া) আজ সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

লালমনিরহাটের ঘটনা তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘পাটগ্রামে এই ধরনের ঘটনা শোনা গেছে যে কিছু লোক বিএনপির নামে সেখানকার থানায় ঢুকে ভাঙচুর করেছে এবং দুইজনকে ছিনিয়ে আনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে, এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

রিজভী জানান, মহাখালীর জাকারিয়া বারে ঢুকে ভাঙচুর ও নারীদের ওপর হামলার ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে। বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মুনির হোসেনের নেতৃত্বে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তাবাদী যুবদল তাক্ষণিকভাবে যুবদলের নামধারী এই নেতাকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করেছে।

রিজভী বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পর থেকে এই ধরনের যত তথ্য পেয়েছি- সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দেশে কোথায় কী ঘটছে, কারা কী করছে– খবর পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিএনপির এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ৪-৫ হাজার বিএনপি নেতাকর্মী, যারা দলের নামে, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নামে, সহযোগী সংগঠনের নামে দুবৃত্ত চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে অথবা দুবৃত্ত চক্র গড়ে তুলেছিল, অনৈতিক কাজের মধ্যে ছিল, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। এক্ষেত্রে বিএনপি এবং এর নেতারা আপসহীন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একেবারে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছেন বলে জানান রিজভী।