বাংলাদেশীদের ভিসা পাওয়া দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৫৮ অপরাহ্ন, ১৩ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১২:৪৮ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কর্মী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবী—সকল শ্রেণির বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশ ভ্রমণের ভিসা পাওয়া এখন দিন দিন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। বিদেশি দূতাবাসগুলোতে জমা পড়া ভিসার অধিকাংশ আবেদনই বাতিল হচ্ছে, এবং যারা ভিসা পাচ্ছেন, তাদেরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যেখানে একসময় ই-ভিসা বা অন-অ্যারাইভাল সুবিধার মাধ্যমে সহজেই বিদেশ ভ্রমণ করা যেত, এখন সেখানে ভিসা পেতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগছে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে এই জটিলতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ভারতের ভ্রমণ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসার অনুমোদন হারও কমেছে। এর ওপর এখন থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ভিসাও বাংলাদেশিদের জন্য ‘সোনার হরিণ’ হয়ে উঠেছে। ইউরোপ ও আমেরিকার ভিসা পাওয়াও আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ আগামী সপ্তাহে

নিয়মিত ভ্রমণকারী ও ইউটিউবার নাদির নিবরাস জানান, তার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি তিনটি দেশের ই-ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও তাজিকিস্তানের মতো দেশের সাধারণ ই-ভিসাও তিনি পাননি। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং ফি-ও ফেরত দেওয়া হয়নি। মলদোভা ও বাহরাইনের ই-ভিসার ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।

কণা করিম, যিনি চাকরি ও পর্যটন সূত্রে একাধিকবার থাইল্যান্ড সফর করেছেন এবং তার পাসপোর্টে ইউরোপ-আমেরিকার একাধিক দেশের ভিসা রয়েছে, তার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এ বছর এপ্রিল মাসে আবেদন করার পর ঢাকার থাই দূতাবাস তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে।

আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের উত্থান, পতন ও পরিণতি

একই অভিজ্ঞতা হয়েছে চীন থেকে নিয়মিত পণ্য আমদানি করা একজন ব্যবসায়ীর। গত তিন বছরে তিনি অন্তত ছয়বার চীন সফর করেছেন, কিন্তু এবার জুন মাসে তার ভিসা আবেদন বাতিল হয়েছে। ব্যবসায়িক স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যবসায়ী বলেন, “সত্যি কথা বলতে কী, এটার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। জরুরি মিটিং এবং ব্যবসায়িক কাজ থাকার পরেও ভিসা পাইনি। গত কয়েক বছরে এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হলো। তবে, ঠিক কী কারণে ভিসা পেলাম না, সেটা জানার সুযোগ নেই।”

ভ্রমণ ও ভিসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করছে, আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে তুলনামূলক সহজে ভিসা পাওয়া যেত। এখন সেই দেশগুলোর দূতাবাসও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। বাংলাদেশ থেকে বেড়ে চলা অবৈধ অভিবাসন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে এর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল, যারা ১৬৫টি দেশে ৩,৯৩৬টি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ভিসার আবেদন গ্রহণ করে থাকে (বাংলাদেশে ২০টি এবং ভারতে ৮০টি দূতাবাসের হয়ে কাজ করে), তাদের মতে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাংলাদেশিদের জাল সনদপত্র জমার প্রবণতা ভিসা প্রত্যাখ্যানের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।

এ প্রসঙ্গে গত ২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বিদেশগামীদের মধ্যে জাল সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেওয়ার প্রবণতা ভিসা জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।