অভিভাবকবিহীন এলজিইডি: নানা প্রশ্ন
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান সংস্থা হলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ সংস্থাটি সারাদেশব্যাপী পল্লী ও নগর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, পুরোনো রাস্তা মেরামত, ব্রিজ, কালভার্ট ও হাটবাজার উন্নয়নের কাজ করে এলজিইডি ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছে।
১৯৮৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো এবং পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে এলজিইডির অধীনে সাড়ে ৩ লাখ কিলোমিটার রাস্তা নির্মিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে জাপানে ১ লাখ দক্ষ কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এলজিইডি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করলেও পরবর্তীতে এর কাজের পরিধি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। এলজিইডি স্থানীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে তিনটি সেক্টরে কাজ করে থাকে। এগুলো হচ্ছে—পল্লি উন্নয়ন, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন ও নগর উন্নয়ন। একই সঙ্গে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়।
এলজিইডির সার্বিক কর্মকাণ্ড দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অবহেলার শিকার হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটি। ফলে এর কার্যক্রমে অনেকটা স্তবিরতা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত: আইজিপি বাহারুল আলম
এরই মধ্যে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে ব্যাপক দুর্নীতির খবর চাউর আছে। বিশেষ করে ঘুষ ছাড়া মেলে না নিয়োগ বা পদোন্নতি। প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, নির্বাহী প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সকল নিয়োগের ক্ষমতা এখন মন্ত্রণালয়ের হাতে। মন্ত্রণালয়ের ইশারা ছাড়া কোনো ফাইল উঠে না বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে গতকাল থেকে এলজিইডিতে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার শূন্য। জ্যেষ্ঠতম অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম থাকলেও গতকাল থেকে পদটি শূন্য করে রাখা হয়েছে। কেন এখনও পদটি শূন্য রয়েছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর পদটি প্রথম গ্রেডের। ফ্যাসিবাদী হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশ ছেড়ে পলায়নের পর শহর-নগর এবং গ্রাম-বাংলা উন্নয়নের প্রধান প্রতিষ্ঠানটির ছন্দপতন ঘটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তার কারণে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সচিব পদমর্যাদার প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তা আলী আকতার অবসরে গেলে কয়েকদিন পদটি শূন্য রেখে গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথকে রুটিন দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী করা হলেও প্রথম গ্রেডে উন্নীত করা হয়নি। গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ অবসরে চলে গেলে দাম হাঁকিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার বা পদটি কয়েকদিন শূন্য রাখা হয়।
তারপর সিনিয়র তিনজন কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করে গত ফেব্রুয়ারির চার তারিখে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ মিয়াকে চলতি দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়। এ নিয়ে তখন বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় এবং টিভির টকশোতে আলোচনার খোরাক জোগায়।
দ্বিতীয় গ্রেডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড–১) করার নিয়ম থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসের সকল রেকর্ড ও রেওয়াজ ভঙ্গ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি বৈষম্যমূলক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের চাকরির মেয়াদও গত শনিবার শেষ হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী যিনি প্রাপ্য তাকেই প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু যথাযথ সময়ে সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে রবিবার থেকে প্রতিষ্ঠানকে অভিভাবকশূন্য করে রাখার কারণ কী—এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
স্ব-বেতনে চলতি দায়িত্ব মানেই পদোন্নতি নয়। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী যদি রুটিন দায়িত্বও দেওয়া হতো, তবুও অভিভাবকশূন্য হতো না সংস্থাটি। এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে এমন ঘটনা কর্মরত প্রকৌশলীরা মেনে নিতে পারছেন না।





