একাধিক হত্যা মামলার আসামি হলেও বৈঠক করছে উপদেষ্টা- সচিবের সাথে

বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির অনুমোদন পাচ্ছে আওয়ামী দোসর শ্যামলের কোম্পানি

Any Akter
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:১৫ অপরাহ্ন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:২৯ অপরাহ্ন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে সরকারের বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষিতে বালাইনাশক উৎপাদনও রপ্তানির জন্য অনুমোদন দিচ্ছে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা মুস্তাফিজুর রহমান শ্যামলের কোম্পানিকে। তার নামে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে ঢাকায় দুটি মামলাও রয়েছে। বগুড়া অন্যান্য জায়গায়ও হত্যাচারটা মামলা করেছে ভুক্তভোগীরা। আওয়ামী লীগের সকল লোকজন পালিয়ে গেলেও অদৃশ্য শক্তিতে এখনো সে বহাল। এমনকি আলোচিত বাণিজ্য সচিবের সাথে ধহরম মহরম করে একের পর এক ব্যবসা বানিয়ে নিচ্ছে। ৩৫ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পদোন্নতি নেওয়া বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের পক্ষে পুরো টাকাটাই দিচ্ছে এই আওয়ামী দোসর ব্যবসায়ী।

পরিবেশের ক্ষতি করে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে । পরিবেশগত সুরক্ষা বিপর্যয় এমন আশংকা থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমানের শ্যামলকে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির অনুমোদন দিতে যাচ্ছে। এ সর্ম্পকে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে। সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুমোদন দেয়া বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশনের অবৈধ সভাপতি শ্যামলকেও থাকার জন্য বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ভাঙ্চুরের ৪টি মামলা রয়েছে। কোনো অদৃশ্য কারণে এখনও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন শ্যামল। একাধিক হত্যা মামলার আসামি হলেও নিয়মিত সচিবালয়ে রয়েছে তার আনাগোনা। বাণিজ্য সচিবের সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে পুরো মন্ত্রণালয় আওয়ামীলীগ নেতা. শ্যামল । তার রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট বলয়। এই কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ফ্যাসিস্ট এর দোসরদের রক্ষায় আমলাদের সাথে লিয়াঁজো রক্ষা করে চলেছেন।

আরও পড়ুন: জোটে না এককভাবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি: সারজিস আলম

সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, এ সভাটি শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার সভা। মূলত মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামলকে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির অনুমোদন দিতেই এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। আইনে যেখানে বলা আছে একটি সংগঠন থাকলে সমজাতীয় আর কোনো সংগঠনকে অনুমতি দেওয়া যায় না। সেখানে কেএফএম মুস্তাফিজুর রহমান অবৈধভাবে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল মেনুফ্যাকচারারস এসোসিয়েশেন নামে সংগঠনটি অনুমোদন নিয়েছে। যে সংগঠনের মাধ্যমে নিজের অবৈধ টাকাগুলোসহ অন্যান্য ফ্যাসিস্টদের টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে আজকের এই আয়োজন। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সহযোগিতায় অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর / প্রতিষ্ঠানের সম্মতি আদায়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে উৎপাদন ও রপ্তানির নামে নতুন দ্বার উন্মোচনের কথা বলে ঐ সংগঠন(বামা) এর বৈধতা নিতে চাচ্ছেন। বাস্তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। কৃষিবিদরা মনে করেন বালানাশক উৎপাদন ও রপ্তানির নতুন দ্বার উন্মোচনের নামে উক্ত মিটিংটি বাংলাদেশের কৃষি এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেশের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। এই কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ফ্যাসিস্ট এর দোসরদের রক্ষায় আমলাদের সাথে লিয়াঁজো রক্ষা করে চলেছেন। সে আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের পতনের আগে গত ২২ জুলাই ২০২৪ ইং শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সাথে একটা মিটিং করেছিল। সেখানে হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল মোস্তাফিজুর রহমান।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বার্হী চেয়ারম্যান ও বালাইনাশক কারিগরি উপদেষ্টা ড. শেখ মোহাম্মাদ বখতিয়ার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বালাইনাশক শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন এর অনুকূলে বিগত ০৯ জুলাই ১৯৭৯ তারিখে বাণিজ্য সংগঠন লাইসেন্স প্রদান করেছে, সেহেতু বালাইনাশক সংশ্লিষ্ট অন্য কোন বাণিজ্য সংগঠনের অনুকূলে বাণিজ্য সংগঠন লাইসেন্স প্রদান মোটেই আইন সম্মত নয়। এছাড়া সরকার স্বীকৃত বালাইনাশক শিল্প সংশ্লিষ্ট “বাংলাদেশ গ্রুপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন” থাকার পরেও বালাইনাশক শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠন থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই রকম আরও একটি সংগঠনকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমতি প্রদান করা হলে বাংলাদেশের শিল্প বালাইনাশক শিল্প, বাবসা, বাণিজ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান: আমান উল্লাহ আমান

কৃষিক্ষেত্রে ফসল সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ বছরে ব্যাপক পরিমাণ বালাইনাশক (কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশকসহ) ব্যবহার করে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো দেশীয় উৎপাদন খুব সীমিত হওয়ায় প্রায় ৯৭ শতাংশ পণ্যই আমদানি করতে হয় এবং কেবলমাত্র ৩ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় দেশীয়ভাবে। সেখানে কীভাবে বামা বালাইনাশক রপ্তানি করবে প্রশ্ন থেকে যায় এবং তা রহস্যজনক!

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামের মাঠে শত বিঘার শস্যচিত্রে ক্যানভাসে শেখ মজিবের প্রতিকৃতি তৈরি করে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিতে মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামলের ভূমিকা অন্যতম। এটি বাস্তবায়ন করছে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সদস্যসচিব এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান (শ্যামল) বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে গণসংযোগ করেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী সমর্থকদের সাথে মতবিনিময়ও করেন। নৌকা মার্কার ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেও টিকিট পেতে ব্যর্থ হন তবে ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। তারপরও থেমে থাকেনি তার দলবাজি ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে ষড়যন্ত্র। এত কিছুর পরও তিনি আওয়ামী দোসরদের সাথে লিয়াঁজো করে সচিবালয় ও তার বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেদারসে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে তার নেতৃত্বে হামলা করা হলেও এখনো তাকে গ্রেপ্তার না করায় অনেক কি বিস্মিত হয়েছে অনেকেই বিস্মিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় আওয়ামী লীগ নেতা মুস্তাফিজুর রহমানের শ্যামলের তদবির বাজিতে বহুমাত্রিক প্রতিভা। বগুড়ার দলীয় নমিনেশন এমপি হওয়া ও কোম্পানিতে দালালি বাণিজ্যের জন্য সব কাজের সামনে নিয়ে আসে শেখ মুজিব কে।

বগুড়ার শেরপুরে ১০০ বিঘা ধান ক্ষেতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করার ব্যবস্থা করেছে এই মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল। অনুসন্ধানে যাওয়া যায় ২০২১ সালের ( ১৬ মার্চ) বিকেলে পৌনে চারটায় গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি মেইল করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদ’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং আহ্বায়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বালেন্দার চোখজুড়ানো দিগন্ত বিস্তৃত মাঠেই তৈরি হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর’ এই প্রতিকৃতি। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ‘শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদ’। এই আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার।

শিল্প-সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ বলেন, ‘এটি একটি বিশাল ইন্সটলেশন আর্ট, বাংলায় যাকে বলা হয় স্থাপনা শিল্প। এভাবে ধানের চারা দিয়ে শিল্পসৃষ্টি একেবারেই নতুন ভাবনা। এটিকে নিউ মিডিয়া বলা যেতে পারে। এই স্থাপনা শিল্পে দেশের প্রধান শস্য ধানের সঙ্গে জাতির জনকের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মাটি আমাদের সম্পদ আর এই মাটি থেকেই মানুষটি উঠে এসেছেন যিনি বাংলাদেশের স্থপতি।’

চিত্রকর্মটি বাস্তবায়নকারী ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালে চীনে তৈরি শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। আর আমাদের এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির আয়তন হবে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রটির দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ ৩০০ মিটার। এই চিত্রকর্ম সম্পন্ন হলে বিশ্বের সর্ববৃহত্ শস্যচিত্র হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এটি স্থান পাবে।

শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিত্রকর্মটি সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের কর্মকর্তা-কর্মচারী। ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের সহকারী ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতির জনকের জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ জাতের ধান চাষের মাধ্যমে এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে এর লে-আউট তৈরি করা হয়। চারা লাগানোর জন্য নির্ধারিত মাঠ প্রস্তুত করা হয়। এই কাজে ১০০ সদস্যের দল অংশ নেয়। প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন শ্রমিক চারা রোপণের কাজ করেছেন।ব্যক্তিগত সুবিধা দেয়ার জন্য এভাবেই সে সরকারের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে।