ঢাকার মগবাজারে আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর রহস্যজনক মৃত্যু, রামগঞ্জে জানাজা সম্পন্ন ও মানববন্ধন
ঢাকার মগবাজারে একটি আবাসিক হোটেলে স্ত্রী, সন্তানসহ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মনির হোসেনসহ তিনজনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রামগঞ্জ উপজেলার ৯ নম্বর ভোলাকোট ইউনিয়নের আথাকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা ও দেহলা গ্রামের বেপারি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তিনজনের মরদেহ দাফন করা হয়।
এর আগে ঢাকা থেকে তিনজনের মরদেহ রামগঞ্জের দেহলা গ্রামে এসে পৌঁছালে স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকাবাসী এই রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটনের দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছে।
আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে পার্কিং করা যাত্রীবাহী বাসে রহস্যজনক আগুন

জানাগেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ৯ নম্বর ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা বেপারী বাড়ির বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৩৮) ও ১৮ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমকে নিয়ে গত শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে চিকিৎসার জন্য ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। চিকিৎসা শেষে রাতে পার্শ্ববর্তী একটি আবাসিক হোটেল ‘সুইট স্লিপ’-এ অবস্থান করেন তাঁরা। রাত ১১টার দিকে তিনজন একসঙ্গে রাতের খাবার খান।
আরও পড়ুন: খুলনা ১ আসনে কৃষ্ণ নন্দী জামায়াতের প্রার্থী হতে পারে
রবিবার সকালে তিনজনকেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আদ-দ্বীন মেডিকেলে নেওয়া হলে সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে একে একে তিনজনই মৃত্যুবরণ করেন।
এই আকস্মিক ও রহস্যজনক মৃত্যু এলাকায় চরম শোক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। এলাকাবাসীর অনেকেই ধারণা করছেন, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুতে দেহলা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকার সাধারণ মানুষ এমন মর্মান্তিক ঘটনার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত মনির হোসেনের তত্ত্বাবধায়ক চাচা রফিককে আটক করেছে পুলিশ। মনির হোসেনের সাথে চাচার ব্যবসায়িক বা পারিবারিক কোনো বিরোধ ছিল কি না, তা তদন্তাধীন।
রাজধানীর মগবাজারের হোটেল সুইট স্লিপের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ২৮ জুন বিকেল ৩টা ৫৭ মিনিটে সৌদি প্রবাসী মনির ও তার তত্ত্বাবধায়ক চাচা রফিক হোটেলে আসেন রুম ভাড়া নিতে। রুম ভাড়া করে তারা চলে যান। ১৫ মিনিট পর মনির হোসেন তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার ও প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন। পরে রফিক হোটেলের পাশের একটি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নিয়ে মনির হোসেনের রুমে নিয়ে আসেন।
পরদিন সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রফিক অসুস্থ অবস্থায় মনিরের স্ত্রীকে হোটেলের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যান হাসপাতালে। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে রফিক তার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে আবার হোটেলে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর মনিরকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর মনির হোসেনের সন্তানকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এতকিছুর পরেও রফিক হোটেল কর্তৃপক্ষকে একবারও কিছু জানাননি। তিনজন মারা যাওয়ার পর বিষয়টি জানতে পারে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, অসুস্থ তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় রফিকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বও।
পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে বিষক্রিয়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ময়নাতদন্তেও চিকিৎসকরা বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যুর কথা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেন। পুরোপুরি নিশ্চিতে ভিসেরা ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রবাসী মনির সৌদিতে থাকলেও ঢাকায় তার বাসা ছিল। লক্ষ্মীপুরে তার যাত্রী পরিবহন বাসের ব্যবসাও ছিল। সব কিছুই খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। মনিরের দুই ভাই দেশের বাইরে থেকে ফিরলেই এ ঘটনায় মামলা দায়ের হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।





