চুয়াডাঙ্গায় কৃত্রিম মরুভূমিতে বেড়ে উঠছে দুম্বা

চুয়াডাঙ্গায় বেড়ে উঠছে মরুর প্রাণী দুম্বা। সাধারণত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে যার বেশি বসবাস সেই দুম্বার খামার গড়ে তোলা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায়। ছোট্ট কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে লালন-পালন করা হচ্ছে এসব দুম্বা। এলাকার আওহাওয়া দুম্বা পালনে অনুকূল হওয়ায় দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে অবস্থিত এই খামারে দুম্বা ছাড়াও বিভিন্ন পশুপাখি লালন-পালন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের অদুরে দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে গো গ্রীন সেন্টারে পরিকল্পিত উপায়ে দুম্বা প্রজনন খামারে পালিত হচ্ছে এবং এখান থেকে চাহিদা মত বিক্রি করা হচ্ছে দুম্বা। জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ জেলায় দুম্বা পালন ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সহযোগীতা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রাণীসম্পদ বিভাগ থেকে জানা যায়, দুম্বা প্রজনন খামারে বর্তমানে দু’ধরনের জাতের দুম্বা রয়েছে। এগুলো হলো মধ্যপ্রাচ্যের সাদা রঙের ‘আয়োসী’ ও আফ্রিকার সাদা ও খয়েরী রঙের ‘রেড মশাই’ জাত। দুম্বা মূলত ছাগল-ভেড়া পালনের মত পালন করা যায়। সবুজ ঘাস, খড়, গমের ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটাগুড়, ছোলা, গাছের পাতা খেয়েই প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে দুম্বাগুলো। সবুজ ঘাস, কাঁঠাল পাতা তাদের পচ্ছন্দ। ছাগল ভেড়ার মতোই লালন-পালন করা হয় এ সকল দুম্বা।
৩ থেকে ৪ মাস বয়সের দুম্বার বাচ্চার ওজন হয় ১২ থেকে ১৫ কেজি। দেড় বছর বয়সের ছাগী দুম্বার ওজন হয় ৪৫ কেজি এবং আড়াই বছরের পাঁঠা দুম্বার ওজন হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি। তারা গর্ভধারণের ৬-৭ মাস পর ১টি অথবা ২টি বাচ্চা প্রসব করে। তবে ১০ থেকে ১২ মাস বয়সে দুম্বা গর্ভধারণের উপযুক্ত হয়। ৬ মাস পর পর প্রত্যেকটি দুম্বার পিপিআর ও গোট পক্স টিকা এবং ৩ মাস পর পর কৃমির ঔষুধ খাওয়ানো হয়। দুম্বা খামার থেকে ইচ্ছুক ক্রেতাদের একটি তালিকা করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুম্বা বিক্রি করা হয়।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার
এ খামারের সহায়ক মনোয়ার হোসেন বলেন, দুম্বা মরুভূমি পচ্ছন্দ করে। তাই এখানে ছোট্ট পরিসরে কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে রাখা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের লাইভস্টক টেকনিক্যাল কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, দুম্বাগুলো খুবই নিরিহ। কোন চিৎকার চেঁচামেঁচি করেনা। বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। বাচ্চা গুলো খুবই সুন্দর হয়। আমরা চেষ্টা করছি উপকারভোগীদের মধ্যে দুম্বা পালন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ জানান, ২০১৯ সাল থেকে দু’টি জাতের দুম্বা আমরা পুষছি। এই প্রজনন খামার থেকে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুম্বার বাচ্চা সরবরাহ করছি। দুম্বা পালনের জন্য পারিবারিক পর্যায়ে ছোট ছোট খামার তৈরীর করার জন্য আমরা আমাদের সদস্যদের উৎসাহিত করছি।
দুম্বা ক্রেতা আব্দুল লতিফ বলেন, ৪-৫ বছর ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে দুম্বা কিনছি। এখানকার দুম্বাগুলো খুবই মানসম্মত এবং ভাল। ভাল মত চিকিৎসা দেয়ার কারনে দুম্বার স্বাস্থ্য ভাল থাকে। আমি ঢাকাতে নিয়ে গিয়ে দুম্বা বিক্রি করি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাবুদ্দিন জানান, প্রাণীসম্পদের উন্নয়ন খাতে দুম্বা পালন একটি সম্ভবনাময় খাত। চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশন আমাদের মাধ্যমে দুম্বা প্রজনন ও সম্প্রসারণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছি।
দুম্বা পালন এ জেলায় একটি সম্ভবনাময় খাত। চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেক খামারী ভেড়ার একটি জাতকে দুম্বা বলে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। দুম্বা প্রজনন খামার থেকে প্রকৃত দুম্বা কিনে ক্রেতারা লাভবান হচ্ছে। মাংস সমৃদ্ধ দুম্বা পালন ও সম্প্রসারণ করতে পারলে এ জেলার খামারীরা আথিকভাবে লাভবান হবে এবং মাংসের চাহিদাও মেটাতে পারবে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।
এ দুম্বা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝেও রয়েছে নানা কৌতুহল। দেশে কোরবানিকৃত দুম্বার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। দেশে দুম্বা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে আমদানি কমবে এবং সহজলভ্যও হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারি সহায়তা। সরকারিভাবে ব্যাংক ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা পেলে দুম্বা পালন বেকার জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।