আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির প্রতিবাদে মোহাম্মদপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মানববন্ধন

মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক এবং কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা রোধে একজোট হয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক কবি আব্দুল হাই সিকদার ও মোহাম্মদপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষক-অভিভাবক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। তারা মোহাম্মদপুরকে মাদক ও কিশোর গ্যাংমুক্ত এলাকা গড়তে প্রশাসনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরের কিশোর গ্যাং, মাদক ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ প্রবণতার কারণে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ওপর। বিশেষ করে এসব এলাকায় কিশোর বয়সীদের বিপথগামী হওয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। যার ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও।
আর এ সকল প্রভাব কাটাতে সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মোহাম্মদপুরের অন্তত ৭০টিরও বেশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘সুশিক্ষা ও সহশিক্ষার মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাং মুক্ত এবং ন্যায়নীতি আদর্শ মোহাম্মদপুর-আদাবর গড়ার প্রত্যয়ে’ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে সামাজিক সংগঠন আলফা স্টার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মোহাম্মদপুর ও আদাবরে স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজের সামনে ‘মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে’ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ‘মাদক নয়, স্বপ্ন চাই’, ‘যে মুখে মা ডাকি, সে মুখে মাদক নয়’, ‘গ্যাং নয়, গড়বো ন্যায়নির্ভর সমাজ’—এমন নানা প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি মোহাম্মদপুরের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ থেকে শুরু হয়ে নূরজাহান রোড, টাউন হল হয়ে তাজমহল রোড এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
মোহাম্মদপুর-আদাবর সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আব্দুল হাই সিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস সালাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই বলেন, মোহাম্মদপুর সম্পর্কে একটি খারাপ ধারণা রয়েছে, মোহাম্মদপুর মানেই সন্ত্রাস, খুন, মাদক। মোহাম্মদপুরে এতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে কেনো এমনটা হয়। আজকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছে। এই শিক্ষার্থীরাই হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে। সেই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে বাংলাদেশ পাল্টে যাবে। আমি মনে করি জুলাই আন্দোলনে আবু সাঈদ যে কারণে প্রাণ দিয়েছিলো—মানবিক, গণতান্ত্রিক, ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ। আমরা যদি দেশকে ভালোবাসি, দেশের ভালো চাই তাহলে মাদককে ‘না’ বলতে হবে। সন্ত্রাসকে ‘না’ বলতে হবে। অন্যায়কে রুখতে হবে। ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা পালন করছে সেটি অবিস্মরণীয়। এমন ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও মোহাম্মদপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ আব্দুস সালাম বলেন, আজকে এটা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা জানেন, মোহাম্মদপুরের আইনশৃঙ্খলার যে চরম অবনতি হয়েছে—খারাপ চিত্রের কোনো কথা উঠলেই মোহাম্মদপুরের নাম সবার আগে থাকে। মোহাম্মদপুরকে আমরা সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। ‘যে মুখে মা ডাকি, সে মুখে মাদক গ্রহণ না করি’—‘মাদককে না বলি, জীবনকে হ্যাঁ বলি’ সহ নানা স্লোগান হাতে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা। এভাবেই আমরা মাদক ও সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজ মুক্ত মোহাম্মদপুর গড়ে তুলবো। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে বাসযোগ্য এলাকা গড়ে তুলবো।
শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, মোহাম্মদপুর-আদাবরের শিক্ষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ। ইনশাআল্লাহ, মোহাম্মদপুর-আদাবরের সকল অন্যায় দূর হবে।
অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে একটি সচেতনতামূলক র্যালিতে অংশ নেয়, যাতে ছিল “মাদক নয়, শিক্ষা চাই”, “কিশোর গ্যাংকে না বলি” ইত্যাদি স্লোগান।
এই উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
ব্যতিক্রম এই আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী আলফা স্টার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসান বলেন, মোহাম্মদপুর-আদাবরের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও রাজনীতিবিদরা একসাথে কাজ করলে সমাজ পরিবর্তন হতে বাধ্য।
উল্লেখ্য, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একের পর এক ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারি এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রতি বছরের চেয়ে গত ১১ মাসে ১০ বার মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করে ওসির অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া, মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা, জেনেভা ক্যাম্প থেকে মাদক উদ্ধারের পর মামলা না নেওয়া, গ্রেপ্তার আসামিকে অন্য মামলায় পাঠানো ও আদালতে পাঠানোসহ নানাবিধ অভিযোগ ওঠে ওসি ইফতেখারের বিরুদ্ধে। তারপরেও ওসিকে অপসারণ না করায় এবার ফুঁসে উঠেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।