মুন্সীগঞ্জে পদ্মার তীব্র ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

Sadek Ali
মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২:০৯ অপরাহ্ন, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৪:২৭ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পরেছেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় তারা তাদের ঘর বাড়ি সড়িয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় বাজার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। পূর্বে ওই বাজার সংলগ্ন নদীতে জিএ ব্যাগ ভর্তি বালু ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই জিও ব্যাগ তিব্র স্রোতে সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে এখোন পর্যন্তু ওই বাজারের ৯ টি দোকান ঘর বিলীন হয়ে গেছে।

পরে দিঘীরপাড় বাজার এলাকায় জিএ ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলে ওই এলাকায় ভাঙন কিছুটা কমলেও পাশের সদর উপজেলার পূর্ব রাখীরকান্দি এলাকায় তিব্র নদী ভাঙন চলছে। চার দিনের ভাঙনে প্রায় ৩০ টি পরিবার গৃহহারা হয়েছেন বলে ওই এলাকার লোকজনের অভিযোগ। এছাড়া ভাঙন দেখা দিয়েছে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কান্দাবাড়ি এলাকায়। ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পথে পুরো গ্রাম। কান্দাবাড়ি এলাকায় প্রায় ২৫ বছর আগে একবার ভাঙনের পর ওই এলাকায় চর পরলে আবার বসত গড়ে স্থাণীয়রা ।

আরও পড়ুন: কৃষক দল নেতা খন্দকার নাসিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারেক রহমানের কাছে মহিলা দলনেত্রীর আবেদন

কিন্তু ২০২২ সাল থেকে আবারও পদ্মা গিলে খেতে থাকে ওই চরাঞ্চলের কান্দারবাড়ি, সরিষাবন, ধানকোরা ও মাঝিকান্দি গ্রাম। এতে প্রায় ৭০০ পরিবার গৃহহারা হয়েছে। বিলীন হয়েছে মসজিদ ও স্কুল, কবরস্থান। প্রথম বার বিলীনের পরে ২য় দফায় দিঘীরপাড় বাজারে টানা তিন বছর ধরে চলছে ভাঙন।

ভক্তভোগীরা অভিযোগ, দিঘীরপাড় বাজারের পাশের যে পদ্মার শাখা নদীটি এখোন ভাঙনের তান্ডব চলাচ্ছে ৬/৭ বছর আগেও এটা ছিলো সরু খালের মতো। যা শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যেতো। কিন্তু ওই সরু খালের মতো নদীটি হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই এই নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। যার গতি প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে পার্কিং করা যাত্রীবাহী বাসে রহস্যজনক আগুন

সরেজমিনে সদর উপজেলার পূর্ব রাখীরকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে চলছে তিব্র নদী ভাঙন। ঘর সড়িয়ে নেওয়ার কাজ করছেন ভুক্তভোগীরা কেউবা আবার গাছ কর্তন করে সড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ গাছের কাঁচা ফল ছিড়ে ফেলছেন। নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে ভিটে মাটির সাথে অনেক গাছ পালাও কেটে সড়িয়ে নেওয়ার সময় টুকুও পাচ্ছেন না তারা। স্থাণীয় কয়েকজন জানান চার দিন যাবৎ এলাকায় নদী ভাঙন চলছে। চার দিনের ভাঙনে আমাদের ৩০ টি বসত বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে।

সদর উপজেলার রাখীরকান্দি ঘরবাড়ি সড়িয়ে নেওয়ার কাজে ব্যাস্ত হায়দার আলী বলেন, দুই বছর যাবতই আমাদের এ এলাকায় নদীতে ভাঙতাছে। কেউ কোন খোঁজ খবরও আমাদের নেই নাই।

একই গ্রামের লিপি আক্তার বলেন, কোন সরকারি লোক আমাদের সাহায্য সহযোগিতা তো দূরের কথা এসে খোঁজ খবরও নিল না। কয়েকদিন যাবত নদী ভাঙতাছে। ওই এলাকার স্থাণীয় রিপন বলেন, চেয়ারম্যানরা ভোটের সময় আসে।  ভোট চাওয়ার সময় হাত পা জড়াইয়া ধরে। তারপর আর তাদের খোঁজ থাকে না।

এ পর্যন্ত দিঘীরপাড় বাজারের ৯ টি দোকানঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে দাবী করেছেন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজল হক মোল্লা। ভাঙন অব্যাহত থাকায় মুন্সীগঞ্জের অন্যতম এই হাটবাজারে প্রায় ২ হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

মফিজল মোল্লা আরও বলেন, আমরা আগেই পানি উন্নায়ন বোর্ডকে সতর্ক করেছিলাম। তারা যদি আগের বালুর বস্তার সাথে আরো বস্তা ফেলতো তাহলে হয়তো আমাদের বাজারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ এভাবে ক্ষতি হতো না।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, সবার আগে ভাঙন রোধের জন্য আমাদের পানি উন্নায়ন বোর্ডের সাথে মিটিং হয়েছে। অচিরেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রাথমিক পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও বেগ ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ফেলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নায়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীর প্রকৌশলী শেখ এনামুল হক জানান, ভাঙ্গন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এরপর সিসি ব্লক ফেলা হবে। তিনি আরও জানান, ২০২০-২১ সালে পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা করার জন্য লৌহজং-টংঙ্গীবাড়ি উপজেলায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। দুই দফা সংশোধিত হয়ে চলমান প্রকল্প ব্যয় ৫২৭ কোটি টাকা হয়েছে। প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি এই প্রকল্প আমরা নির্ধারিত সময়ে শেষ করবো এবং ভাঙ্গন রোধ করবো।