সিলেট বিমান বন্দরে ভিড় না করার নির্দেশনা, জনদুর্ভোগের আশঙ্কায় অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ বিএনপির
আজ মধ্যরাতে লন্ডনের হিথ্রু বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তারেক রহমান। বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে তিনি পরিবারসহ দেশে ফিরছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের নেতা বাংলাদেশ বিমানের এক নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হিথ্রু বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে আগামীকাল সকালে সিলেটে যাত্রাবিরতি পর বেলা ১১:২০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবেন, ইনশাআল্লাহ।”
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নিলেন রুমিন ফারহানা
ঢাকায় হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ। এরপর সড়ক পথে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। পথিমধ্যে তিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে অর্থাৎ ৩০০ ফুটে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বিএনপি।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “এটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে। সেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন।” এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে তারেক রহমান গুলশান এভিনিউতে ১৯৬ নং বাসায় পৌঁছাবেন। এই বাসায় তারেক রহমান থাকবেন।
আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে শিক্ষা দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ, ঘুষ দাবির কল রেকর্ড ভাইরাল
দ্বিতীয় দিনে কর্মসূচিতে আছে, বাদ জুম্মা শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত এবং সেখান থেকে সড়কপথে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এই দুইটি কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, “পরদিন তারেক রহমান নিজে ভোটার হিসেবে যা করতে হয় সেই কাজগুলো করবেন। এছাড়া সেদিন শরীফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত এবং পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে যাবেন। তবে এসব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যথাসময়ে দিনের কর্মসূচিগুলো গণমাধ্যমকে জানানো হবে।”
‘অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ’
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই যে, প্রিয় নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এই ঐতিহাসিক আয়োজনকে বাস্তবায়িত করতে দলের পক্ষ থেকে অনিবার্য অত্যাবশ্যক এবং নূনতম যে সকল কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে, সেজন্য সৃষ্ট অসুবিধা ও কষ্টের জন্য। আপনারা জানেন, জনাব তারেক রহমান এমন কোন কর্মসূচি সমর্থন করেন না যা জনদুর্ভোগের কারণ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে লন্ডন হিথ্রু বিমানবন্দর প্রবাসী নেতা-কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি হতে নিষেধ করেছেন।”
“বাংলাদেশেও আমাদের কোন কর্মসূচি যেন জনদুর্ভোগের কারণ না সৃষ্টি করে, সেই নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন। আমাদের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও এক শতভাগ প্রতিপালন সম্ভব হয়নি। তারপরও জনদুর্ভোগের জন্য আমরা অগ্রিম ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করছি।”
তিনি বলেন, “তিনি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, তিনি বিমানবন্দর থেকে তার চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ মা, বাংলাদেশের অভিভাবক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যেতে চান, তার পিতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারতে যেতে চান, তার ভাইয়ের (আরাফাত রহমান কোকো) কবরের পাশে যেতে চান। জনদুর্ভোগ এড়াতে তিনি সরকারি ছুটির দিনকে তার প্রত্যাবর্তনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।”
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “৩০০ ফুটের অনুষ্ঠানটি কোন জনসভা নয়, সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানও নয়। শুধুমাত্র দেশবাসীর প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দেশনেত্রী সহ দেশের সকলের কল্যাণ কামনায় দোয়ার অনুষ্ঠান।”
“সেই আয়োজনে তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন বক্তা থাকবেন না। আমরা এই আয়োজনের কলেবর যত ছোটই রাখি না কেন, ১৭ বছর ধরে অপেক্ষমান দেশের সকল প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মী সমর্থকদের জনস্রোত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমাদের নেই। তারপরেও আমাদের কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে তাদের বেশির ভাগ কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করে অনুষ্ঠানস্থলে আসার।”
রাজধানীতে বিভিন্ন পয়েন্টে অভ্যর্থনা কেন্দ্র, যানবাহন পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান, মেডিকেল ক্যাম্প, ফিল্ড হাসপাতাল প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের দলগত যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেটা সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটা অংশ হল চেয়ারপার্সন সিকিউরিটি ফোর্স (CSF)। তারপর আমাদের দলীয় নেতাকর্মী এবং সর্বোপরি বাংলাদেশে আপাময় জনসাধারণ, এটি আমাদের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি।”
“সরকারের তরফ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সকল ধরনের সহায়তার জন্য সরকার তার বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং সব গভার্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন আমাদের দলীয় শক্তি সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।”
‘সিলেট বিমান বন্দরে ভিড় না করার নির্দেশনা’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সিলেট, মহানগর, জেলার নেতা-কর্মীদের জানাচ্ছি, নির্দেশক্রমে আগামীকাল আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান দেশে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ বিমানটি প্রথম ল্যান্ড করবেন সিলেট বিমান বন্দরে।
সিলেট জেলার কোনো নেতা-কর্মী বিমান বন্দরে ভিড় করবেন না। বিমান বন্দরে কেউ যাবে না। আমাদের নেতা ওই বিমানেই ঢাকায় পৌঁছাবেন। ঢাকায় এসে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কথা বলবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির সদস্য মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল উপস্থিত ছিলেন।





