কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ আহত ৪

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:০০ অপরাহ্ন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

 ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদরাসা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ  ঘটনায় নারী ও শিশুসহ চারজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে  এ ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসাটির একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। পুলিশ জানায়- ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ক্রাইম স্কিন ইউনিট যেসব সরঞ্জামাদি পেয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকা দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- গোলবল জাতীয় কথিত বোমা, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাইপ বোমা, শর্টগানের সীসা গুলি, সাদা রংয়ের পাউডার (বোমা তৈরির কথিত কাঁচামাল), ক্যামিকেল কনটেইনার, বৈদ্যুতিক ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, টাকা গণনার মেশিন, একটি ফিঙ্গার স্টেপ চাকু সিলভার রঙের, হ্যান্ডকাপ, স্পাই ক্যামেরা, বিভিন্ন ধর্মীয় বই, প্লাস্টিকের পুরুষাঙ্গ, সেক্স জেল, গ্লিসারিন, পুলিশের বেল্ট, ওয়্যারলেস সেটের চার্জার, রিমোট কন্টোল চাবির রিং। পরে উদ্ধারকৃত ককটেল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঝিলমিল এলাকার ফাঁকা স্থানে নিষ্ক্রিয় করেছে বোম ডিস্পোজাল ইউনিট। 

আরও পড়ুন: টঙ্গী মাঠে তাবলীগের জোড় ও বিশ্ব ইজতেমায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা

গতকাল শনিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে  ককটেল, দাহ্য পদার্থ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে ক্রাইম সিন দল ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জাকির হোসেন জানান, হঠাৎ বিকট শব্দের সঙ্গে একটি ইটের মতো বস্তু তার মাথায় আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভবনের মালিক পারভিন বেগম জানান, ২০২২ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরে মুফতি হারুন নামে এক ব্যক্তি মাদ্রাসা পরিচালনার উদ্দেশে ভবনটি ভাড়া নেন। প্রায় তিন বছর ধরে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছিল। আলামিন ও তার স্ত্রী আছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি হারুন মাঝে মধ্যে সেখানে আসতেন। বিস্ফোরণে মাদ্রাসা ভবনের আসবাবপত্র, জানালার কাঁচ ভেঙে যায় এবং দেয়ালের একটি অংশ উড়ে যায়। আশপাশে কাঁচ ও দেয়ালের টুকরা ছড়িয়ে পড়ে। পাশের মোহাম্মদ হোসেনের মালিকানাধীন ভবনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসাশিক্ষক আলামিনের দুই ছেলে উমায়েদ (১০) ও আবদুল্লাহ (৮), মেয়ে রাবেয়া (৬) এবং পাশের একটি সিএনজি গ্যারেজের শ্রমিক জাকির হোসেন (৪৫) আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: শেরেবাংলা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামানের ডিগবাজি, জামাই–বউয়ের যৌথ চাঁদাবাজি

মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণের রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেফতার বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য:

গত শুক্রবার সকাল ১০টায় সময় হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণের একটি ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় যে, মাদ্রাসাটির ২টি কক্ষের দেয়াল ও ছাদের কিছু অংশ বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়েছে। পুলিশ জানায়, উম্মাল কুরা মাদ্রাসার দুইটি কক্ষে আনুমানিক ২৫-৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে জনৈক শেখ আল আমিন (৩২) মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন এবং অন্য ২টি কক্ষে আল আমিন স্ব-পরিবারে বসবাস করেন। শেখ আল আমিন এর পিতার নাম আব্দুর রকিত শেখ। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানার গাওলা বাজারের সারুলিয়া কুল্লায় (রাজপট)। সে গত ২০২২ সাল হতে ভাড়া নিয়ে ২টি কক্ষে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন এবং অন্য ২টি কক্ষে আল আমিন স্ব-পরিবারে বসবাস করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনদের নিকট হতে পুলশ জানতে পারে যে, জনৈক আল আমিন এর ৩টি শিশু সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে উমায়ের (১০), আব্দুর রহমান (২) বিস্ফোরণে আহত হয়। তারা প্রথমে স্থানীয় আদ-দ্বীন হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। 

স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনদের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল হতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ৪টি ককটেল সাদৃশ্য বস্তু, ১টি ল্যাপটপ, ২টি মনিটর উদ্ধার করে পুলশ। সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট, এন্টি টেররিজম ইউনিট (অঞট) এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিট ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন ও তদন্তে নিয়োজিত হন। শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া (২৮)কে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আছিয়া’র (২৮) দেওয়া তথ্য মতে, আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারকে (৩০) হাসনাবাদ এলাকা হতে ও আসমানী খাতুন  আসমা (৩৪) কে গতকাল  ঢাকার বাসাবো তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি অনুসন্ধানে ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পলাতক শেখ আল আমিন (৩২) ২০১৭ সালে এবং ২০২০ সালে গ্রেফতার হন এবং তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন থানায় ৭টি মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ধৃত আসামী আসমানী খাতুন আসমা এর নামেও দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।