শেরেবাংলা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামানের ডিগবাজি, জামাই–বউয়ের যৌথ চাঁদাবাজি
পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের দোসর ২৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকানের ভাই, সে শেরেবাংলা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান অনেকটা প্রকাশ্যেই এখনও পুরো চাঁদাবাজির আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে। ৫ আগস্টের পরে কয়েক ডজন হত্যাসহ কয়েকটি মামলা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে আগ্রহ নেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান ও তার বউ ফারজানা আক্তার প্রকাশ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক দিয়ে টেন্ডারবাজির একক নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভোল পাল্টে এখন বিএনপি সেজে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাই এরা এখন লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স থেকেও চাঁদা নেয়। চাঁদা না দিলে প্রকাশ্যে চলে হামলা। এলাকাটিতে যেন তিন ভাইয়ের রামরাজত্ব চলছে। আসাদুজ্জামানের হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নং ০১৯১১১১১৫৮১ ও তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার ০১৮১৮৯২৯৪৯৫ দিয়ে প্রকাশ্যেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে। শেরেবাংলা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামানের স্ত্রী ফারজানা আক্তার বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: টঙ্গী মাঠে তাবলীগের জোড় ও বিশ্ব ইজতেমায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা
আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক দিয়ে টেন্ডারবাজির একক নিয়ন্ত্রণ পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের দোসর ফোরকানের ভাই আসাদুজ্জামানের হাতেই। তাদের রয়েছে দর্পণ ইলেকট্রনিক্স নামে ইলেকট্রনিক্স পণ্য সরবরাহকারীর প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি লাইসেন্স। ঠিকানা ২০২, পশ্চিম আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা। ৫ আগস্টের পরেও সরবরাহকারীর প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়ে বাগিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটির টাকার সরকারি কাজ। দর্পণ ইলেকট্রনিক্সের প্রোপ্রাইটারের নামে রয়েছে ফারজানা আক্তার, মিজানুন রহমান ও ফাতেমা বেগম। আসাদুজ্জামানের কমিশন না দিয়ে কোনো ঠিকাদার কাজ করতে পারেন না এ এলাকায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কাউন্সিলর ফোরকানরা তিন ভাই। তিনজনের বিরুদ্ধেই আছে কয়েক ডজন মামলা ও বিস্তর অভিযোগ। পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা ছিল তিন ভাই। পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আয় করেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। বলা যায়, একেবারে শূন্য থেকে তারা স্থানীয় অনেকের চোখের সামনেই পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদে ক্ষমতা ব্যবহার করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে এ তিন ভাইয়ের সাঙ্গপাঙ্গদের বিচরণ নেই। এখন ডিগবাজি দিয়ে আসাদুজ্জামান বিএনপির পদ-পদবি দেওয়ার চেষ্টা করছে। বড় বড় সরকারি অফিস এ এলাকায় হওয়ায় এখন চক্রটি টেন্ডার বাণিজ্যও দখল—এখনও তাদের হাতে।
আরও পড়ুন: ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে এ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এখনও ফোরকানের ভাই আসাদুজ্জামানের নিবিড় যোগাযোগ আছে উল্লেখ করে এক ব্যক্তি বলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নেতা বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের দোসর সরকার দলীয় বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের কর্মী বানিয়ে এ বখাটেদের দিয়েই চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে কাউন্সিলর ফোরকান দলীয় কর্মী দাবি করে ছাড়িয়ে নেন। এখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতেও গড়িমসি করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জয়নাল আর কালু মূলত ফোরকানের ভাই আসাদের হয়ে বিএনপি বস্তি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের লাখ লাখ টাকা আদায় করে আসাদকে দেওয়া হয়। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন তাদের হয়ে কাজ করে তারা। ফোরকানসহ তিন ভাইয়ের সঙ্গে কালু-জয়নালের সংশ্লিষ্টতার কথা প্রকাশ করেন এই মামলার বাদী দেলোয়ার ঢালী।
এ বিষয়ে দুলাল ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করে মামলা করেন। এ ছাড়া নারী নির্যাতনসহ লুটপাট, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধারায় শাহ আলম কালু ও জয়নালসহ আসাদ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা আছে শেরেবাংলা নগর থানায়।
জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই।’
চাঁদাবাজি না করলে মামলা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘পুলিশ জানে আমি কোনো ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ থাকা সত্ত্বেও আপনি এখন বিএনপির পরিচয় দিচ্ছেন কেন—প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।
পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে আপনি কাউন্সিলরের ক্ষমতাবলে চাঁদাবাজি করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আসাদ বলেন, ‘ভাই, এমন তো হওয়ার কথা নয়। তাহলে এখন কী করব, আপনিই বলে দিন।’





