প্রতারণা করে ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়ার অভিযোগ
সরকার উৎপাতে ষড়যন্ত্রে দুই মার্কিন নাগরিক ৫ দিনের রিমান্ডে
প্রতারণা ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা দাবি করে রহস্যজনকভাবে সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গোলাম মোস্তফা আজাদ নামে আরো এক মার্কিন নাগরিককে আটক করা হয়েছে বিমানবন্দর থেকে। এর আগে মন্ত্রীপাড়া থেকে আটক এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিম চৌধুরীকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ আদালতে হাজির করা হয়। রমনা থানায় সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় এই দুই মার্কিন নাগরিককে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে মহানগর আদালত।
৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার পর এনায়েত করিম দুদিন একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ছিলেন। ওই হোটেল বুকিং ও তার ভাড়া পরিশোধ করেছিলেন জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী অংশের মহাসচিব পরিচয় দেওয়া কাজী মামুনুর রশিদ। গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম এসব তথ্য দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: শীশা বারে হত্যাকাণ্ডের জেরে চাঁদার হার দ্বিগুন করেছেন বনানী থানার ওসি
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রমনা থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সোমবার ওই মামলায় আদালত এনায়েত করিমকে রিমান্ডে নিয়ে ৪৮ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলা বাজার পত্রিকাকে জানান, এনায়েত করিমকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরেক মার্কিন নাগরিক গোলাম মোস্তফা একই অভিযোগে আটক করা হয়েছে। গোলাম মোস্তফা আজাদ সোমবার রাতে আমেরিকা যাওয়ার জন্য বিমানবন্দর গেলে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে আটক করে ডিবিতে হস্তান্তর করে। তাকেও এনায়েত করিমের সঙ্গে মামলায় আসামি করা হয়। তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনের বিষয়ে জানা গেছে। তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে ওই সব সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
আরও পড়ুন: এসপি হতে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগে পুলিশ সুপারকে দণ্ড
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, এনায়েত করিম ২০ বছরের বেশি সময় ধরে একটি প্রভাবশালী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান পরিচয় দিয়ে বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর স্বপ্ন দেখিয়ে, কখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল ডিনারে আমন্ত্রণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিনি অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও অনেক নেতার কাছ থেকে অর্থ নেন। ২০১৮ সালের পর বিএনপিপন্থী এক সাংবাদিক নেতা এবং নবগঠিত একটি দলের নেতার (তিনি পরে দলটি ছেড়ে যান) সঙ্গে সখ্য গড়েও এনায়েত করিম প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। এই দুজনের সঙ্গে এখনো এনায়েত করিমের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলেও (২০০১-০৬ সাল) একবার এনায়েত করিমকে প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এনায়েত করিমের প্রতারণার বিষয়ে একটি সূত্র জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একজনকে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে কয়েকজন র্যাব কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসে। তখনও এনায়েত করিম সরকার পরিবর্তনের আভাস দিয়ে কারও কারও কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী অংশের মহাসচিব হিসেবে পরিচয় দেওয়া কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, এনায়েত করিমের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্কও দীর্ঘদিনের। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গেও এনায়েত করিমের সখ্য ছিল। এনায়েত করিম বাংলাদেশে এলে এরশাদের সঙ্গে দেখা করতেন। মূলত পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে এনায়েত করিম বাংলাদেশে এলে তিনি আপ্যায়ন করতেন। এবারও তিনি হোটেল বুকিং ও ভাড়া পরিশোধ করেছেন। মামুনুর রশিদ যখন যুক্তরাষ্ট্রে যান, তখন এনায়েত করিম তাঁকে আপ্যায়ন করেন। এখানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক ছাড়া অন্য কিছু নেই।





