হাট ভরা কোরবানির পশু, দাম নাগালে আসার অপেক্ষায় ক্রেতারা

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:৩৫ অপরাহ্ন, ১৪ জুন ২০২৪ | আপডেট: ৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, ১৫ জুন ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আর মাত্র দিন তিনেক বাকি কোরবানি ঈদের। এরই মধ্যে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের গবাদি পশুতে ভরে উঠেছে কোরবানির হাটগুলো। তবে ক্রেতা সমাগম এখনও আশানুরূপ নয়। আর যা ক্রেতা আছেন, তারাও বেশিরভাগ বাজার যাচাই করে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই চিন্তার ভাঁজ পড়ছে বিক্রেতাদের কপালে। একদিকে ক্রেতারা বলছেন, আকাশচুম্বী দাম হাঁকা হচ্ছে; অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দামই বেড়েছে। এ অবস্থায় ঈদ দরজায় কড়া নাড়লেও এখনও জমে ওঠেনি বেচাকেনা।

হাট ঘুরে অনেক ক্রেতাই বলছেন, এ বছর কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে তাদের ধারণারও বাইরে। তাই দাম কমার জন্য আরও অপেক্ষা করতে চান তারা। তাদের দাবি, সিন্ডিকেট ও বিভিন্ন ধরনের ছলচাতুরি করে কোরবানির পশুর দাম বাড়িয়ে চাইছেন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন: প্রথম ১০ দিনে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করলেন ৯৬ হাজারের বেশি করদাতা

এদিকে সরকারি হিসাব বলছে, দেশে এবার চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশুর সংখ্যা বেশি আছে। গতকালই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। অর্থাৎ ২২ লাখেরও বেশি পশু উদ্ধৃত্ত আছে এবার । বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় সরবরাহ ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। দেশে প্রয়োজনের চেয়ে পশুর উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি আছে।

প্রাণিসম্পদ খাতের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, রেকর্ডসংখ্যক কোরবানিযোগ্য পশু মজুত আছে এবার। সে হিসাবে দাম অন্য বছরের তুলনায় কম হওয়ার কথা; কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটছে না।

আরও পড়ুন: পাম অয়েলের দাম লিটারে কমলো ১৯ টাকা

এ ব্যাপারে খামারিরা বলছেন, গবাদিপশু লালনপালনের খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পশুখাদ্যের দাম গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এর প্রভাবই পড়েছে কোরবানির পশুর বাজারে।

অপরদিকে সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে, মানুষের আয়-রোজগার সে হারে বাড়ছে না। তার ওপর কোরবানির পশু ব্যবসাকে ঘিরে আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এই মুহূর্তে যেমন দাম চাওয়া হচ্ছে, তা মানুষের বাজেটের তুলনায় অনেক বেশি। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই এখনই কোরবানি পশু না কেনার চিন্তা তাদের। ক্রেতা না পেলে শেষ মুহূর্তে এসে হলেও ব্যবসায়ীরা অযাচিত দাম চাওয়া বন্ধ করবেন বলে আশা তাদের।

শুক্রবার (১৪ জুন) রাজধানীর গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট ভরা গরু নিয়ে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। হাকডাকও তেমন একটা নেই। গরু-ছাগলের পাশাপাশি উট, দুম্বা, মহিষ, ভেড়াও উঠেছে এ হাটে। ক্রেতার আনাগোনা চোখে পড়ার মতো না।

বিক্রেতারা বলছেন, বড় আকারের গরুর দাম জিজ্ঞেস করেই ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন, কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

হাট ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় মোসলেম উদ্দিন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, গতবার যে গরু এক লাখ টাকায় পেয়েছিলাম, এবার সেরকম একটা গরুর দামই দুই লাখ ২০ হাজার চাচ্ছে। দুই লাখের নিচে নামতেই রাজি না বেপারী। সাধের সঙ্গে সাধ্যের ব্যাপারটাও তো দেখতে হবে। দরকার হলে চাঁদ রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আশা করি, দাম অনেকটা পড়ে যাবে।

তানজীব রহমান নামে আরেকজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, কোরবানির পশুর কোনো অভাব নাই। এরপরও দাম ছাড়তে রাজি হচ্ছে না বিক্রেতারা। দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। হাটের এ মাথা থেকে ওই মাথা ঘুরেও বাজেট অনুযায়ী গরু পাচ্ছি না। অতিরিক্ত দামের জন্য খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দাম অর্ধেকে না আসা পর্যন্ত গরু কিনবো না। ক্রেতা না পেলে এমনিতেই দাম পড়ে যাবে।