শেষ মুহূর্তে কে হচ্ছেন জবি ট্রেজারার

AK Azad
আরাফাত চৌধুুরী, জবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ন, ০২ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ১:৩০ অপরাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১১ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আওয়ামীপন্থী উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম পিএইডি। একইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট ও বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে দীর্ঘ একমাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন এবং প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী। 


গত ১৯ সেপ্টেম্বর সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ড. রেজাউল করিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার চারদিন পর (২২ সেপ্টেম্বর) ট্রেজারার ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি শূন্য হয়ে পড়ে।


আরও পড়ুন: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যমুনা সেতু অবরোধ

ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংশ্লিষ্ট সকল কাজের অনুমোদন, দেখভাল করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখেন ট্রেজারার। সাধারণ শিক্ষার্থীরা শূন্য এই পদে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ এবং শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষককে প্রত্যাশা করেন। অর্থ ও হিসাব সংশ্লিষ্ট এ পদে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষকরাই তাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখবে এমন শিক্ষককেই ট্রেজারার হিসেবে দেখতে চায় তারা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের দুই সিনিয়র অধ্যাপকের পরবর্তী ট্রেজারার হওয়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে। তারা হলেন ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া ২০০১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদানের মধ্যে দিয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ২০০৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দান করেন এবং ২০১৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তিনি দুই মেয়াদে বিভাগটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৩-২০১৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি ও অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান থেকে ই বিজনেস ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেন। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড থেকে ২০১৭ সালে পিএইচডি এবং ২০১৮ সালে পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (১৯৯৬ সাল) ও স্নাতকোত্তর (১৯৯৭ সাল) সম্পন্ন করেন।


অধ্যাপক মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়ার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত ৩০ টি প্রবন্ধ রয়েছে। এছাড়াও তিনি 'Sustainable Banking and Sustainable Finance' নামে প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক মানের বই রচনা করেন।
তিনি বর্তমানে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সদস্য। একই সাথে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটির সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কাস অফিসে এক্সপার্ট হিসেবে হিসেবে কাজ করছেন।
ট্রেজারার পদে আলোচনায় থাকা অন্যজন শিক্ষক হলেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করেন এবং ২০২১ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তিনি ডেনমার্কের অ্যালবর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনোভেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রেনরশিপে এমএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ড্যানিডা স্কলারশিপ নিয়ে অ্যালবর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি ডিগ্রি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন বোর্ডের মেম্বারশিপ লাভ করেন।


আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানমের মৃত্যু

অধ্যাপক ইমরানুল হক একজন প্রতিথযশা গবেষক। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তার ৫০ টির বেশি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ডেনমার্ক সরকারের অর্থায়নে ২টি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি অলবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়, ডেনমার্ক এর সাস্টেইনেবিলিটি ল্যাবে গবেষক হিসেবেও কাজ করছেন। এছাড়াও তিনি ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস একাডেমি কনফারেন্স সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গবেষণা নিবন্ধ পরিবেশন করেন। তিনি এমবিএ ও বিবিএ ভর্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ (প্রফেশনাল কোর্স) ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।