গাজা শান্তি পরিকল্পনায় রাজি হামাস ও ইসরায়েল: ট্রাম্প

গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, “আমি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। খুব শিগগিরই সব বন্দি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল সেনা নির্ধারিত সীমারেখা পর্যন্ত সরে যাবে।”
আরও পড়ুন: গাজায় প্রথম দফায় মুক্তি পেলেন যারা
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের সব দফা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। এতে যুদ্ধের অবসান, বন্দিদের মুক্তি ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”
মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা
আরও পড়ুন: ঢাকায় আসছেন ড. জাকির নায়েক
বুধবার মিসরের রেড সি রিসোর্ট শহর শার্ম এল-শেখে আলোচনার তৃতীয় দিনে কাতার, তুরস্ক, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশ নেন। ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, এবং ইসরায়েলের কৌশলবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার উপস্থিত ছিলেন।
হামাসের প্রতিনিধি দলে ছিলেন খালিল আল-হাইয়া ও জাহের জাবারিন, যারা গত মাসে দোহায় ইসরায়েলি হত্যাচেষ্টা থেকে প্রাণে বেঁচে যান।
হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ইজজাত আল-রিশেক বলেন, “কাতার, তুরস্ক ও মিসরের গোয়েন্দা প্রধানদের অংশগ্রহণ আলোচনায় নতুন গতি এনেছে। এতে যুদ্ধ শেষের ও বন্দি বিনিময়ের পথে ইতিবাচক ফল আসবে।”
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ পিআইজে–এর একটি প্রতিনিধি দলও আলোচনায় যোগ দিতে মিসরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানান, মধ্যস্থ আলোচনায় “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” হয়েছে, এবং ফলাফল ইতিবাচক হলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে।
পরিকল্পনার প্রথম ধাপ
প্রথম ধাপে গাজায় থাকা ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনো জীবিত। পাশাপাশি ইসরায়েল তার সেনাদের একটি নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত প্রত্যাহার করবে।
তবে আল-জাজিরার বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা জানান, এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মতপার্থক্য রয়ে গেছে—বিশেষ করে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা প্রশাসন ও হামাসের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে।
তিনি বলেন, “আপনি বলতে পারেন, প্রাথমিক ধাপের শুরুটা কার্যকর হচ্ছে। উভয় পক্ষই বন্দি-বিনিময় নিয়ে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে।”
গাজায় হামলা অব্যাহত
আলোচনা চললেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত আটজন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৬১ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, গত পাঁচ দিনে ইসরায়েল ২৭১টি বিমান ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে, যাতে ১২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন—তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটিতে ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের হামলায় অনেক আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে, যদিও হামলার তীব্রতা কিছুটা কমেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যাতে অন্তত হামাসের যোদ্ধারা বন্দিদের দেহ উদ্ধার ও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালাতে পারে।
মানবিক সংকট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে কেবল ১৪টি আংশিকভাবে কার্যকর, আর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর এক-তৃতীয়াংশ চালু রয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় পুরো দুই মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।