রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন

আরও পড়ুন: চাকসুতে পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জাবেদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য, ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন শিক্ষককে ‘হেনস্তা’ করার ঘটনায় জড়িতদের বিচার এবং শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার (পোষ্য কোটা) দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের কমপ্লিট শাটডাউন চলছে।
আরও পড়ুন: জুলাই পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির মডেল ছাত্রশিবির : সাদিক কায়েম
গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন রাবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন।
মোক্তার হোসেন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং কর্মকর্তাদের হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের দৃশ্যমান বিচার কার্যকর করতে হবে। আমাদের ‘প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা’র দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাট ডাউন থাকবে। চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎসহ জরুরি প্রয়োজন এই কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। তবে ক্লাস-পরীক্ষা এই কর্মসূচির আওতায় থাকবে।
রাকসুর বিষয়ে তিনি বলেন, এই কর্মসূচির কারণে রাকসু পিছিয়ে গেলে সেই ব্যর্থতা প্রশাসনের, আমদের না।
এর আগে, শনিবার থেকে শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ও তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে। ওই দিন বেলা তিনটার দিকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে তাঁর গাড়ি আটকে 'প্রতীকী ভিক্ষাস্বরূপ' টাকা-পয়সা গাড়ির উপরে দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। উপ-উপাচার্যকে ভিক্ষা দেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান করলে পাশে থাকা রিকশাচালক গাড়ির উপরে ভিক্ষাস্বরূপ ৫ টাকা ও ক্যাম্পাসের এক ভিক্ষুক ১০ টাকা দেন।
এক পর্যায়ে গাড়ির চাবি কেড়ে নেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। ফলে তিনি পায়ে হেঁটে বাসভবনের দিকে রওনা দিলে তাঁর বাসভবনে ঢুকতে না দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি প্রক্টর মাহবুবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জুবেরী ভবনের দিকে যান। শিক্ষার্থীরাও পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে। উপ-উপাচার্যকে জুবেরী ভবনে উঠতে না দিয়ে তাঁর হাত ধরে সিঁড়ির উপর ফেলে দেয় আন্দোলনকারীরা।
এক পর্যায়ে সেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ কয়েকজনকে সামনে থেকে বাধা দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পাশে থাকা প্রক্টর ও শিক্ষকরা উপ-উপাচার্যকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। উভয়পক্ষের ভিতরে টানহেঁচড়া হয়। ওই সময় উপ-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামের দাঁড়ি ধরে টান দেবার ঘটনাও ঘটে। বেশ কিছুক্ষণ এই পরিস্থিতি বিরাজ করে।
কিছুক্ষণ পর অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন সিঁড়ি বেয়ে জুবেরী ভবনে উঠতে গেলে একজন শিক্ষার্থী পিছন থেকে হাত ধরে সিঁড়িতে ফেলে দেয়। তিনি উঠে আবার উপরে যেতে উদ্যত হলে সামনে থাকা আরেক শিক্ষার্থী আবার জাপটে ধরে। দুজন শিক্ষকের সহায়তায় ছাড়া পেয়ে জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে পড়েন।
ওই সময় আবারও উপ-রেজিস্ট্রারের দাঁড়ি ধরে টান দেন এক শিক্ষার্থী। তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। সালাহউদ্দিন আম্মারকেও দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
কয়েক ঘণ্টা জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ অনেকে। অবশেষে রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সামনে থেকে তাঁদের অবস্থান তুলে নেন। এতে উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্তি পান।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পোষ্য কোটা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।