সুদানে আধাসামরিক ও সেনাবাহিনীর সংঘাতে জাতিসংঘ কর্মীসহ নিহত ২৭

Shakil
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:২৫ পূর্বাহ্ন, ১৬ এপ্রিল ২০২৩ | আপডেট: ৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। চলমান এই সংঘাতে দেশটিতে ২৭ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিন কর্মীও রয়েছেন।

অন্যদিকে সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার (১৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরও পড়ুন: ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের অভিযানে অংশ নেওয়া পাইলটদের সর্বোচ্চ সামরিক পদক দিলো পাকিস্তান

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনী এবং কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে আফ্রিকার এই দেশটি কেঁপে উঠেছে। সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২৭ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই বাহিনীর লড়াই থেকে অবশ্য রাজধানী খার্তুমে বাসিন্দারা দূরে রয়েছেন এবং সুদানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, রাষ্ট্রীয় টিভি ও সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখলে নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আধা-সামরিক বাহিনী।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে পাকিস্তানকে কঠিন হুঁশিয়ারি দিলেন মোদি

বিবিসি বলছে, নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিনজন কর্মীও রয়েছেন। সামরিক বাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা একটি সামরিক ঘাঁটিতে গুলি বিনিময়ের সময় তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সুদানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বই এ সংঘাতের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে সুদানের সেনাবাহিনী এবং তার বিরোধী আধা-সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) উভয়ই দাবি করেছে, তারা রাজধানী খার্তুমের বিমানবন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যদিও এসব এলাকায় রাতভর লড়াই চলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া দারফুর অঞ্চলের শহরগুলোসহ সুদানের অন্যত্রও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

সেনাবাহিনী বলেছে, বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান আরএসএফ’র ঘাঁটিতে আঘাত করছে। একইসঙ্গে শনিবার রাতে মানুষকে তাদের বাড়িতে থাকতে বলেছে দেশটির বিমান বাহিনী। তবে খার্তুমের বাসিন্দারা বিবিসিকে তাদের আতঙ্ক ও ভয়ের কথা জানিয়েছেন। একজন জানিয়েছেন, তাদের পাশের বাড়িতে গুলি চালানো হয়েছে।

শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সহিংসতায় অন্তত ২৭ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সুদানের একটি চিকিৎসক ইউনিয়ন। তারা জানায়, হতাহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক তা জানা যায়নি। এর আগে, চিকিৎসকদের এই ইউনিয়নটি বলেছিল, সংঘাতে তিনজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিবিসি বলছে, সুদানের পশ্চিমে কাবকাবিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে আরএসএফ এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের পর জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তিনজন কর্মচারী নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি দুর্বল সম্প্রদায়ের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান করে থাকে।

এছাড়া এই ঘটনায় অন্য আরও দুই কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার সময় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বেশ কিছু গাড়ি লুট করে আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিল’-এর নামে দেশ পরিচালনা করছিলেন।

এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।

বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

সেনাবাহিনী বলছ, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানান, এ দু’টি বাহিনীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল।