সুদানের এল-ফাশার দখলের পর হাজারো মানুষ নিখোঁজ
সুদানের পশ্চিম দারফুরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)–এর দখলের পর এল-ফাশার শহরজুড়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শহর থেকে পালাতে গিয়ে হাজারো মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন, অনেকে খুন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
১৮ মাসের অবরোধ শেষে গত রবিবার উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশার আরএসএফ)-এর নিয়ন্ত্রণে আসে। এটি ছিল পুরো দারফুর অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি। এরপর জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: ভেনেজুয়েলার তেলকে নিজেদের সম্পদ দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
এক প্রত্যক্ষদর্শী আলখেইর ইসমাইল জানান, তিনি পালানোর সময় ৩০০ জনের একটি দলসহ আরএসএফ) যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠী আমাকে চিনে ফেলায় আমাকে বাঁচিয়ে দেয়, কিন্তু বাকি সবাইকে হত্যা করা হয়, বলেন তিনি।
আরেক নারী তাহানি হাসান জানান, আরএসএফযোদ্ধারা হঠাৎ এসে তাদের থামিয়ে তল্লাশি চালায়। তারা আকাশে গুলি ছোড়ে, সবাইকে মারধর করে, এমনকি আমাকেও তল্লাশি করা হয়, বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: শিশু নিরাপত্তায় নতুন উদ্যোগ: গ্র্যান্ড মসজিদে চালু হলো পরিচয় ব্রেসলেট
ফাতিমা আবদুররহিম, যিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে পাঁচ দিন হাঁটে টাওইলায় পৌঁছেছেন, বলেন, “তারা ছেলেদের পিটিয়েছে, সব কিছু লুট করেছে। আমাদের কিছুই রেখে যায়নি।”
রাওয়া আবদাল্লা নামের এক তরুণী বলেন, তার বাবা এখনো নিখোঁজ। আমরা জানি না তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন।
গণহত্যা, ধর্ষণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৬২ হাজার মানুষ এল-ফাশার থেকে পালিয়েছে। কিন্তু মাত্র ৫ হাজারের বেশি মানুষই টাওইলায় পৌঁছাতে পেরেছেন।
এমএসএফ এর জরুরি বিভাগের প্রধান মিশেল অলিভিয়ে লাশারিত বলেন, আমাদের ধারণা, পালানোর পথে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, বাধা দেওয়া হচ্ছে, এমনকি তাড়া করে ধরে হত্যা করা হচ্ছে।
সংস্থাটি জানায়, টাওইলায় পৌঁছানো ৭০টি শিশুর সবাই অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ৫৭ শতাংশের অবস্থা গুরুতর।
বেঁচে ফেরা অনেকে জানিয়েছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা লিঙ্গ, বয়স ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে আলাদা করে, এবং অনেককে ৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন সুদানি পাউন্ড (৮–৫০ হাজার ডলার) মুক্তিপণ দাবিতে আটক রাখে।
একজন নারী জানান, তার স্বামী মুক্তিপণ দিতে পারলেও আরএসএফ সদস্যরা তাকে সন্তানদের সামনে গুলি করে হত্যা করে। এক কিশোরী বলেন, সৈন্যরা তাকে ধর্ষণ করেছে।
জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, অক্টোবর ২৯ তারিখে এল-ফাশারের মাতৃসদন হাসপাতালে আরএসএফ-এর হাতে অন্তত ৪৬০ জন নিহত হয়েছেন।
পাশের রাজ্য উত্তর কর্দোফান থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে, ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ বারাহ এলাকা থেকে পালিয়েছে, যা গত সপ্তাহে আরএসএফ দখল করে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানান, বারাহ শহর দখলের পর রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ স্বেচ্ছাসেবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নারীদের ওপর যৌন সহিংসতারও বহু প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
সুদান ডাক্তার্স নেটওয়ার্ক–এর মুখপাত্র মোহাম্মদ এলশেইখ জানান, পালানো মানুষের অবস্থা শোচনীয়। “বারাহ থেকে এল-ওবেইদ শহর পর্যন্ত যাত্রা বিপজ্জনক মরুভূমি পথে, দিনে প্রচণ্ড গরম আর রাতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, বলেন তিনি।
আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত দশ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত, ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গৃহহীন, এবং দেশটি এখন জাতিসংঘের মতে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে রয়েছে।
সূত্র: আল-জাজিরা





