সব মামলায় খালাস তারেক রহমান

বিচারিক আদালতে সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিম্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে থাকা সর্বশেষ মামলা ‘হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্তির উদ্দেশ্যে ঘুষ লেনদেন’ এর অভিযোগ থেকে তারেক রহমানসহ আটজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারিক আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মুহা. আবু তাহের এই রায় ঘোষণা করেন। এর ফলে বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের আর কোনো মামলা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
এই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবাহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়। এক-এগারোর সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে মামলাটি করেছিল। ২০০৮ সালের ১৪ জুলাই তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেছিলেন।
আরও পড়ুন: সেনানিবাসের বাড়ি সাবজেল ঘোষণা প্রসঙ্গে ঢিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম
বিএনপির আইনজীবী বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিপক্ষে কোনো স্বাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি দুদক। এখন কোনো মামলা না থাকার কারণে তারেক রহমানের দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা নেই।
তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ঢাকার বিশেষ জজ ৩-এর বিচারক বসুন্ধরা গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে তিনি বলেছেন, এটি একটি হোপলেস মামলা। অন্যায়ভাবে এ মামলা সাজানো হয়েছিল। তখনকার সময় কারও অন্যায় ইচ্ছা-অভিলাষ পূরণের জন্য এ মামলা হয়েছে। প্রসিকিউশন এ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক-এগারোর মঈন ইউ আহমেদের সময় রাজনীতিবিদদের বিভাজিত করার চেষ্টা হয়েছে। মইন ইউ আহমেদ ও মাসুদ উদ্দিন আহমেদ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে একটা এজাহার করালেন। প্রথমে ৬ পরে ৮ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলা করাই হয়েছিল তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। মামলার তার বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষী ছিল না। জনৈক আলমগীর নামে একটা লোককে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে জবানবন্দি দিয়েছিল। সেখানে তারেক রহমানের নামোল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে এ আলমগীরের আর কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। এ মামলায় আদালতে ১৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছে। সেখানে তারেক রহমানের ব্যাপারে তারা একটা শব্দও বলেনি। তিনি আরও বলেন, এ মামলার মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে সকল মামলা শেষ হয়েছে। তার আর কোনও মামলা নেই।
আরও পড়ুন: সাবেক সিএমএম রেজাউল করিম চৌধুরী সাময়িক বরখাস্ত
বিএনপির আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, আসামিদের বিপক্ষে কোনও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি দুদক। তার বিরুদ্ধে দেশে আর কোনও মামলা নেই। ফলে ওনার দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনও বাধা নেই।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৪ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির খুন হলে একটি হত্যা মামলা হয়। ওই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক আবুল কাসেম রাজধানীর রমনা থানায় একটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। তবে ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারেকসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারেক রহমান আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো থেকে খালাস পেয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের মা বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান গত ৬ আগস্ট। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় তাদের সাজা হয়েছিল।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের আগ্রহ, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান দেশে ফিরছেন কবে সে বিষয়ে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তার ফেরার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ের কথাও বলেছিল। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা আইনি বাধা কাটানোর কথা জানিয়েছিল। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, কেবল আইনি বাধা নয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার সঙ্গে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও তার নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত।