প্লট দুর্নীতির মামলা

হাসিনা-জয়-পুতুল ছাড়া আরও যাদের সাজা হলো

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ন, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৩১ পূর্বাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনায় করা তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পৃথক দুটি মামলায় তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এই রায় ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: চারবার প্রধানমন্ত্রী হলেও সম্পদের প্রতি শেখ হাসিনার এত লোভ: বিচারক

মামলাগুলোতে শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে আরও ১৮ জন সরকারি কর্মকর্তা ও সাবেক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকারকে খালাস দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, নীতিমালা লঙ্ঘন ও তথ্য গোপন করে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে একাধিক সরকারি প্লট বরাদ্দ নেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। নিজেদের মালিকানাধীন জমির তথ্য গোপন করে তারা ‘অযোগ্য হয়েও’ প্লট বরাদ্দ নেন—এমন অভিযোগই তদন্তে উঠে আসে।

আরও পড়ুন: জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ৫ বছরের কারাদণ্ড

সমন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও শেখ হাসিনাসহ বেশিরভাগ আসামি আদালতে উপস্থিত হননি। ফলে পলাতক অবস্থাতেই তাদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়।

কার কত বছরের সাজা

শেখ হাসিনা : ৩ মামলায় ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এক লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে দেড় বছরের কারাদণ্ড।

সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) : এক মামলায় ৫  বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল : এক মামলায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন : ২ মামলায় ৬ বছর করে মোট ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এক লাখ টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬ মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ : ৩ মামলায় ৬ বছর করে মোট ১৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এক লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে দেড় বছরের কারাদণ্ড।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার : ৩ মামলায় ৬ বছর করে মোট ১৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এক লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে দেড় বছরের কারাদণ্ড।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন : ৩ মামলায় ৬ বছর করে মোট ১৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এক লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে দেড় বছরের কারাদণ্ড।

সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার : ৩ মামলায় ১ বছর করে মোট ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। পাঁচ, দশ ও পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ মাস করে ৩ মাসের কারাদণ্ড।

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা : ৩ মামলায় ৫ বছর করে মোট ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। পঞ্চাশ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে ৯ মাসের কারাদণ্ড।

রাজউকের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন : ৩ মামলায় ৩ বছর করে মোট ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ২০ হাজার টাকা করে মোট ষাট হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাস করে ৬ মাসের কারাদণ্ড।

মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.) : ৩ মামলায় ৩ বছর করে মোট ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ২০ হাজার টাকা করে মোট ষাট হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাস করে ৬ মাসের কারাদণ্ড।

রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ : এক মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাস কারাদণ্ড।

রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস : ২ মামলায় ৩ বছর করে মোট ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাস করে ৪ মাসের কারাদণ্ড।

 রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম : ২ মামলায় ৩ বছর করে মোট ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাস করে ৪ মাসের কারাদণ্ড।

রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম : এক মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাস কারাদণ্ড।

রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) মো. কামরুল ইসলাম : এক মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাস কারাদণ্ড।

রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমান : এক মামলায় ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড।

রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাবিবুর রহমান সবুজ : এক মামলায় ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড।

রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ : ২ মামলায় ১ বছর করে মোট ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ মাস করে ২ মাসের কারাদণ্ড।

রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মাজহারুল ইসলাম : এক মামলায় ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড।

রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম : ৩ মামলায় ১ বছর করে মোট ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ মাস করে ৩ মাসের কারাদণ্ড।

এর মধ্যে আসামি খুরশীদ আলমকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে তোলা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। বাকি আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

এর আগে গত রোববার এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি। তারা আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি।

আদালত সূত্রে জানা যায়, প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬ মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়।

গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অপরদিকে বাকি ৩ মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।রায় ঘোষণার পর দুদক প্রসিকিউটর মইনুল হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে পৃথক তিন মামলায় ৭ বছর করে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেক মামলায় ১ লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে ৬ মাস করে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা এ রায়ে খুশি নই। 

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম প্রত্যেক মামলায় শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। দুদকের সাথে কথা বলে আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব কি না সিদ্ধান্ত নেব। তবে দোষী প্রমাণিত হলেও সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় আমরা এ রায়ে অখুশি হয়েছি।