মোহাম্মদপুরে ঢাবির শিক্ষার্থীদের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলা, মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার লালমাটিয়া এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায় স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাং দলের সদস্যরা। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলেও হামলাকারীদের খুঁজে না পাওয়ার অজুহাতে চার দিনেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। যদিও ভুক্তভোগী অভিযোগ, মামলা না করে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় লালমাটিয়া এলাকায় 'কলাকেন্দ্র' একটি প্রদর্শনী দেখা শেষে ডি ব্লকের খেলার মাঠে বসে আড্ডা দেওয়ার সময়ে কিশোর গ্যাং সদস্যরা ঢাবির এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করে। এই সময়ে ওই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা অপর তিনজন প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর
এই ঘটনায় হামলায় জড়িতদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ দিলেও হামলাকারীদের খুঁজে না পাওয়ার অজুহাত ও প্রাথমিক তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করছে পুলিশ।
হামলায় আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ সাজিদ-উল-ইসলাম (২৪) থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, “আমার বন্ধু তাসমিয়া তাবাসসুম নেবুলা (২৩), অনুরাভ আশরাফ রাজ্য (২২) এবং রাফিদুল হক রাহিম (২২) ২৯ জুলাই 'কলাকেন্দ্র' একটি প্রদর্শনী দেখা শেষে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে লালমাটিয়া ডি ব্লকের খেলার মাঠের মাঝখানে বসে কথা বলছিলাম। এই সময়ে মিমোন খান ও আবিরসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়া তাবাসসুম নেবুলা (২৩) এর ভ্যানিটি ছুড়ে ফেলে দেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে আসামিরা আমাকে এলোপাথাড়ি মারধর করে। হামলার সময়ে মিমোনের আঙুলের ভিতরে ফিঙ্গার ট্রিগার দিয়ে আমার মাথায় এলোপাথাড়ি আঘাত করে। এ সময় আমার বন্ধু অনুরাভ আশরাফ রাজ্য (২২) এগিয়ে আসলে আবিরের হাতে থাকা ধারালো সুইচ গিয়ার দিয়ে অনুরাভের পিঠের ডান পাশে আঘাত করে। এই সময়ে আমাদের ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামিরা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি সহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল হতে চলে যায়।”
আরও পড়ুন: দুর্নীতির তদন্তে সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের ব্যাংক হিসাব তলব
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, স্থানীয়দের সহযোগিতায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা। অনুরাভের পিঠে সেলাই দেওয়া হয়।
হামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাজিদ বলেন, “ঘটনার দিন আমরা বসে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করে কয়েকজন এসে প্রথমে তাসমিয়ার ব্যাগ ধরে টান দেয়। এরপর এর প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর শুরু করে। পরে বন্ধুরা আমাকে বাঁচাতে গেলে ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলাকারীরা প্রচণ্ড আগ্রাসী ছিল। অথচ চার দিনেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।”
খেলার মাঠে রাজধানীর দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর ও ছুরিকাঘাতের জড়িতদের বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলায় জড়িতরা সবাই স্থানীয় একটি বস্তির বাসিন্দা। ওই বস্তির উঠতি বয়সী একদল কিশোর লালমাটিয়া ও এর আশেপাশের এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এমনকি মসজিদ সমাজ এলাকার এক বাসিন্দাকে ৫ই আগস্টের পর মারধর ও কুপিয়ে প্রায় পঙ্গু করে দিয়েছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। সেই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে।
ঘটনার দিন হামলাকারীরা নিজেদের স্থানীয় দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করলেও সবাই ভাসমান।
সেদিনের হামলায় এস কে আবির (২০), পিতা মনসুর আলী; মিমুন খান (২০), পিতা আসাদ; সিয়াম, পিতা চিকো শহীদ; মিনহাজ, পিতা দোলা; শুকুর, পিতা লিটন; সাজ্জাদ, পিতা আতা মিয়া; ইকরামুল, পিতা মনির; সুজন, পিতা শহীদ; ইয়াসিন, পিতা বুলবুল; বাইজিদ, পিতা মোস্তফা এবং সুমন, পিতা হারুন জড়িত ছিল। উল্লেখিত হামলাকারীদের সবাই লালমাটিয়ার মসজিদ সমাজ এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা।
চার দিনেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ভুক্তভোগীকে বলেছি মামলা করতে। কিন্তু তারা আসেননি। যারা হামলা করেছে তাদের নাম-ঠিকানা দিতে বলেছি। কিন্তু তারা বলেছে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমাকে জানাবে।”
মামলা না করে মীমাংসার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের কথা আমি বলিনি। কারা হামলা করেছে তাদের তো আমি চিনিই না। কাদের নিয়ে আমি মীমাংসা করাবো?”
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, “ঘটনার বিষয়ে জেনে আমি এখনই মামলা নেওয়ার ব্যবস্থা করছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”