জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের নির্দেশ

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ন, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১:৩৫ পূর্বাহ্ন, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছরের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার ওপর বড় ধরনের আঘাত এসেছে। জাতিসংঘের এক নথি অনুযায়ী, কঙ্গো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক কাটছাঁট এবং সদস্য প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের মুখোমুখি একমাত্র দেশ হলো বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতিতে একটি বড় ধাক্কা।

আরও পড়ুন: পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে একক দলের মাতবরি থাকবে না: নুর

নথিতে দেখা যায়, ক্যামেরুন, সেনেগাল ও মিশরের কনটিনজেন্টে আংশিক হ্রাস ঘটানো হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ ইউনিটকে (ফর্মড পুলিশ ইউনিট বা এফপিইউ) পুরোপুরি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে জাতিসংঘ।

প্রত্যাহারের নির্দেশ পাওয়া এই ইউনিটে মোট ১৮০ জন সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে ৭০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা। এই নারী কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই জাতিসংঘের একমাত্র সর্বমহিলা পুলিশ ইউনিটের সদস্য, যারা মাত্র দুই মাস আগেই কঙ্গোতে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে

সূত্রের খবর, এই ইউনিটের ১৬২ জন সদস্যকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

বাকি ১৮ জন প্রশাসনিক ও লজিস্টিক কাজ শেষে নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, জাতিসংঘের বাজেট সংকট ও 'ডাউনসাইজিং' নীতির কারণে বাংলাদেশ পুলিশের এফপিইউকে নভেম্বরের মাঝামাঝির মধ্যে ফিরিয়ে আনার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, "বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, কারণ ইউনিটটি খুব ভালো পারফর্ম করছিল।" তবে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পাঁচ বছর আগে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করা একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এই সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক দুর্বলতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, "জাতিসংঘ সাধারণত ডাউনসাইজিং করলে সব দেশের ক্ষেত্রেই তা সমানভাবে হয়। এবার শুধু বাংলাদেশকেই পুরোপুরি ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"

বাংলাদেশ পুলিশের নারী ইউনিট ২০০৫ সাল থেকে কঙ্গোতে কাজ করছে এবং তাদের সাফল্য জাতীয় গৌরবের প্রতীক। এ বছরের আগস্টে এই ইউনিটের মেডেল প্যারেডে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, যা জাতিসংঘের আস্থার প্রতীকস্বরূপ ছিল।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় গৌরব ও মর্যাদা এনে দিলেও সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ না থাকায় এখন সেটি হুমকির মুখে। একজন সিনিয়র নারী কর্মকর্তা দ্রুত কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত। নামিবিয়ায় প্রথমবারের মতো পুলিশ সদস্য পাঠানোর পর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে ২১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন। বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে জাতিসংঘ সম্প্রতি তাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কাঁটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।