মিছিল থেকে কয়েকজনকে আটক করার দাবি শিক্ষকদের

প্রাথমিকের শিক্ষকদের পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ার শেল নিক্ষেপ, আহত অন্তত ৫০

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:১৫ অপরাহ্ন, ০৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৬:৩৫ অপরাহ্ন, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপে করেছে পুলিশ, এ বাধার কারণে কারণে তারা শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ পালন করতে পারেননি। এ সময় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং তাদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষকরা। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

তবে পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পালন করতে না পারায় আন্দোলনরত শিক্ষকরা আবার শহীদ মিনারে ফিরে যান, সেখানে সকাল থেকে তারা অবস্থান নিয়েছেন। এদিন বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনের জন্য মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জলকামান ছুড়ে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। এদিন বিকাল পৌনে ৫টার আরেক শিক্ষক নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, আমরা ৫০ জন শিক্ষককে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসেছি। তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলে আহত। তবে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, শিক্ষকরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হওয়ার বিষয়ে কোন তথ্য এখনও আমরা পাইনি। 

আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের

১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ পালন করতে শাহবাগে অবস্থান নিতে গেলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এসময় শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নারীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা। তবে তাৎক্ষণিক তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’র ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এরপর তিন দফা দাবিতে তারা শাহবাগের দিকে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে বহু শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিকেলে শাহবাগে ‘পেন ড্রপ’ কর্মসূচিতে প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে একদল কলম দিয়ে গেলেও পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে শিক্ষকদেরই আরেকপক্ষ। সেসময় তাদের নিয়ন্ত্রণ ও ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে যে কয়েকটা গ্রুপ আছে এটা আমরা জানি না। তাদের মধ্যে এক দল এসে শান্তিপূর্ণভাবে কলম দিয়ে যায়। আমার হাতে সে কলমগুলো এখনও আছে। কিন্তু এরপরই অন্য একদল আমাদের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিই। এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। 

আরও পড়ুন: জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সহিংসতা চালাতে চায় আওয়ামী লীগ

এদিকে, গতকাল শনিবার বিকাল ৫টায় গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠান ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কিছু আন্দোলনকারী ‘কলম সমর্পণের’ নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়। আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল,গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যে সব এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা মেনে চলার জন্য সবাইকে আবার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো কারণ ছাড়াই আক্রমণ করেছে পুলিশ। অন্যায়ভাবে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে বলেও জানান তারা। এ ঘটনায় শিক্ষক ও পুলিশ দু’পক্ষেরই কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আমরা কলম সমর্পণ কর্মসূচি করতে শাহবাগে অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করি। শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার আগেই রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ শিক্ষকদের আটকে দেয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে শিক্ষকরা দাবি আদায়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের কয়েকজন শিক্ষিকাসহ অনেকে আহত হয়েছেন।

পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আসাদ আলম বলেন, আমরা ৩ দফা দাবিতে শাহবাগে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ করতে যাচ্ছিলাম। পুলিশ বিনা উসকানি আমাদের ওপর ‘টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তিনি বলেন,আমরা আজ কলম বিসর্জন দিয়েছি। মাননীয় প্রধান এবং শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আমাদের নিবেদন, আমাদের দাবিগুলো পূরণ করুন। আমরা বিদ্যালয়ে ফিরে গিয়ে কোমলমতি বাচ্চাদের পাঠদান করি।

শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো-সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতার স্থায়ী সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম এবং ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এতে সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। অন্যদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। তাদের দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এ পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।