নারী ফুটবলের সাফল্য পুঁজি করে বাণিজ্যের অভিযোগ

Any Akter
ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ন, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২:০৭ পূর্বাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ নারী ফুটবল যে গল্প এক সময় অবহেলা, তাচ্ছিল্য আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ তা এশিয়ার মঞ্চে পরিচিত নাম। তবে সেই সাজানো বাগানেই এখন পড়েছে অশুভ হাত। বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা নারী ফুটবলের সাফল্যকে পুঁজি করে একটি পক্ষ বাণিজ্যিক ফায়দা লুটতে চাইছে—এমন অভিযোগ উঠেছে ফুটবল অঙ্গনে।

এক যুগের বেশি সময় ধরে দিন-রাত পরিশ্রম করে নারী ফুটবলকে এই অবস্থানে নিয়ে আসা হয়েছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ এশিয়ান ফুটবলে জায়গা করে নিয়েছে। অথচ সেই অর্জনকে সামনে রেখে এখন খেলার চেয়ে বাণিজ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: ভারতকে ১৯১ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতলো পাকিস্তান

নারী ফুটবল নিয়ে বাফুফের সংগঠকদের মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। ঘরের কথা আর ঘরে থাকছে না। স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিভক্তির রেখা, কর্মকর্তাদের মধ্যে ফাটল। কারা নারী ফুটবলকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য করতে চাইছে, সেই মুখগুলোও ধীরে ধীরে সামনে আসছে।

আগামী ২৯ ডিসেম্বর নারী ফুটবল লিগ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু লিগ আয়োজন ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম বিভ্রান্তি। কখনো বলা হচ্ছে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে পুল হবে, আবার বলা হচ্ছে পুল হবে না।

আরও পড়ুন: বার্নাব্যুতে ঘুরে দাঁড়াল রিয়াল, এমবাপে ছুঁলেন রোনালদোর ঐতিহাসিক রেকর্ড

এ বিষয়ে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছেন। তিনি বলেন,আমি পরিষ্কারভাবে বলছি—কোনো পুল হবে না। কীভাবে এসব কথা ছড়িয়েছে জানি না। এক মাসের মধ্যে লিগ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কিরণ। ১১ দল নিয়ে এক রাউন্ডের খেলা, একটি মাঠে পুরো লিগ আয়োজন—এ ধরনের লিগ দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনে না বলেই তার মত।

কিরণ বলেন, এই লিগটা আরও বেশি সময় নিয়ে করা যেত। এখন কম সময়ের মধ্যে করতে হচ্ছে। যাই হোক, সামনে এশিয়া কাপ আছে—এই লিগটা মূলত সেই প্রস্তুতির অংশ।

লিগে বয়সভিত্তিক ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েও আপত্তি ছিল কিরণের। তার মতে, অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলারদের জন্য আলাদা লিগ হওয়া উচিত। প্রপার লিগ এভাবে হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমি চাই দেশি ফুটবলারদের সুযোগ বেশি থাকুক। ফরেন ফুটবলার হলে দুইজন, খেলবে একজন। আপাতত এশিয়া কাপের কথা মাথায় রেখে এই কম্বিনেশন করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে তো নিয়মিত লিগ হয় না।

বাফুফে কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুর মৃত্যুর পর নারী ফুটবল পুনর্গঠনের পরিকল্পনা শুরু হয়। কাজী সালাহউদ্দিন ও মাহফুজা আক্তার কিরণ—এই দুজনের হাত ধরেই নারী ফুটবলের বর্তমান সাফল্যের ভিত্তি গড়ে ওঠে।

নারী ফুটবল দলকে আবাসিক ক্যাম্পে তোলা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, খেলোয়াড়দের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন—সবকিছুই হয়েছিল প্রবল বাধা ও কটূক্তির মুখে। নারী ফুটবল বন্ধ করার দাবিও উঠেছিল বাফুফের ভেতর থেকেই। তবুও থামেননি তারা।

খেলোয়াড়দের জন্য এসি, ওয়াশিং মেশিন, পুষ্টিকর খাবার, মিডিয়া ট্রেনিং, ইংরেজি শিক্ষা, পড়াশোনার জন্য শিক্ষক, দেশি-বিদেশি কোচ—সব মিলিয়ে একটি আধুনিক কাঠামো তৈরি করা হয়। ফিফার সঙ্গে সমন্বয় করে খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামোতেও আনা হয়।

এর ফল—বয়সভিত্তিক দল থেকে সিনিয়র পর্যায় পর্যন্ত একের পর এক সাফল্য। নারী সাফে বাংলাদেশ পরপর দুইবার চ্যাম্পিয়ন।

বাফুফেতে নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাবিথ আউয়াল নারী ফুটবলে নতুন মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে গুঞ্জন রয়েছে, তার নাম ব্যবহার করে একটি পক্ষ নারী ফুটবলের পরিকল্পনা নিয়ে টানাটানি করছে। দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত ও ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার কারণে ক্লাবগুলোও বিরক্ত।

সংশ্লিষ্টদের মতে, যার কাজ সে করলে এবং স্বচ্ছতা বজায় থাকলে নারী ফুটবল যেমন এগোবে, তেমনি বাফুফেকেও অপ্রয়োজনীয় সমালোচনার মুখে পড়তে হবে না।