চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের অভিযোগ

খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা করেছে সিআইডি

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৫:০৪ অপরাহ্ন, ২৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:০৪ অপরাহ্ন, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য ও সংগঠিত চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনা গ্রুপের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকার মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পক্ষে রমনা থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা নং—১৬, তারিখ ২৫/১১/২০২৫।

আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের উত্থান, পতন ও পরিণতি

আশির দশকের শেষ দিকে একটি পুরাতন বাস দিয়ে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি প্রায় ২০টি বাসের মালিক হয়ে যান। এরপর ধীরে ধীরে তিনি পরিবহন মালিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন এবং রাজনৈতিক পরিচয় বাড়ান—প্রথমে বিএনপিতে, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হন।

২০০৮ সাল থেকে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতন পর্যন্ত টানা ১৬ বছর তিনি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এই দীর্ঘ সময়ে পরিবহন সেক্টরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

আরও পড়ুন: অবসরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—বাস মালিকদের কাছ থেকে দৈনিক ও মাসিক চাঁদা আদায়, কোনো নতুন বাস রুটে নামাতে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা বাধ্যতামূলক পরিশোধ, নতুন বাস কেনার সময় মালিকদের সেই বাসের একটি ‘ভাগ’ এনায়েত উল্লাহকে দিতে বাধ্য করা, ঢাকা ও সারাদেশের টার্মিনালগুলোতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাঁদা আদায়, সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন।

বিএফআইইউ, ব্যাংক, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পরিবহন সমিতি ও মিডিয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে সিআইডি জানায়—এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থ–সংশ্লিষ্ট ১৯৯টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ২,১৩১ কোটি টাকা, উত্তোলন হয়েছে ২,০০৭ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য—এনা ট্রান্সপোর্টের ৪৩টি হিসাবে জমা ৯৩৪.০৪ কোটি, উত্তোলন ৯০৬.৯৬ কোটি টাকা। এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ৮টি হিসাবে জমা ৪১০.৩৮ কোটি, উত্তোলন ৪০৮.২৫ কোটি টাকা। এনায়েত উল্লাহর ব্যক্তিগত ৭৪টি হিসাবে জমা ৪৫৯.০৮ কোটি, উত্তোলন ৪০২.৭৩ কোটি টাকা।

সিআইডির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘স্ট্রাকচারিং’ বা ‘স্মার্ট লেয়ারিং’ কৌশলে অবৈধ অর্থ বিভিন্ন হিসাবে ঘুরিয়ে মোট ১০৭ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ টাকা মানিলন্ডারিং করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে—ধানমন্ডির ২টি ফ্ল্যাট ও রূপগঞ্জের ২টি প্লট ক্রোক করা হয়েছে (আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা), তাদের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ, মোট স্থিতি প্রায় ১১০ কোটি টাকা। আদেশ কার্যকর হয় ৩ জুলাই ২০২৫।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর খন্দকার এনায়েত উল্লাহসহ পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

সিআইডি জানিয়েছে, রাষ্ট্রের অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীদের আইনের আওতায় আনতে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।