সরকার উৎখাতে এনায়েত করিম ষড়যন্ত্র

সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ গ্রেফতার, গোয়েন্দা নজরদারিতে আরও ২৯ জন

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ন, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৫৪ অপরাহ্ন, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সাংবাদিক নেতা জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জনতা দল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শওকত মাহমুদকে গতকাল রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মালিবাগ এলাকা থেকে আটক করেছে।  তার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করে একটি নতুন কেয়ারটেকার সরকার গঠনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ মামলার জবানবন্দিতে নাম এসেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র  ও উপ পুলিশ কমিশনার মিডিয়া তালেবুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন।  পুলিশ জানায়, রাজধানীর মালিবাগ এলাকা থেকে সাংবাদিক নেতা  শওকত মাহমুদকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের মামলা রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, রমনা থানায় দায়ের করা সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে আসামিদের জবানবন্দির প্রেক্ষিতে।  এই মামলায় মোট ৫ আসামিকে গ্রেফতার করা হয় । এনায়েত করিমের সহযোগী হিসেবে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের একজন ডিআইজি ও তার দেহরক্ষীকে দরখাস্ত করা হয়েছে। উপরের ডিআইজির কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে।  গ্রেফতারকৃতরা হলো- এনায়েত করিম গ্রুপে মাসুদ করিম,  মার্কিন নাগরিক গোলাম মোস্তফা,  জাতীয় পার্টির রওশনপন্ত্রী মহাসচিব মামুনুর রশিদ ও সাংবাদিক আজহার আলী সরকার।  তাদের দেওয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির প্রেক্ষিতে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনকে গোয়েন্দা পুলিশ খুঁজছে।  জানা যায়, আদালতে এনায়েত করিম ৩৪ জনকে উপদেষ্টা করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উৎখাত করে একটি সরকার গঠনের ষড়যন্ত্র করেছিল।  এনায়েত করিমের দেওয়া তালিকা মোতাবেক ওই উপদেষ্টাদের নাম ঠিকানা খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। এনায়েত করিমের মোবাইল ফোন, বক্তব্য, জবানবন্দি যাচাই-বাছাই করে স্বীকারোক্তির সাথে মিল হচ্ছে। তদন্ত সংস্থা সূত্র জানায়, তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: এটিইউ প্রধানের সঙ্গে এফবিআই প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়

আটকের পর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম ও তার সহযোগী গোলাম মোস্তফাকে  আটকের পর তিন দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে আদালতে। তাদের জবানবন্দি অনুযায়ী সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করছে পুলিশ।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে এনায়েত করিম (৫৫) প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টো রোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। তাই তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে রমনা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি অবহিত করলেন সিইসি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফেরেন।

এর আগে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, আসামি এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিম একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফরেনশিক করে তথ্য যাচাই বাছাই করছে গোয়েন্দারা।