শরিকদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা, মান্না-সাকি-নুররা কে কোন আসনে
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের শরিক সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আরও আটটি আসন ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসনভিত্তিক তালিকা ঘোষণা করেন।
সমঝোতার আওতায় নির্ধারিত আসনগুলোর মধ্যে বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, নড়াইল-২ আসনে এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যশোর-৫ আসনে ইসলামী ঐক্য জোটের মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস, পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ঝিনাইদহ-৪ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ঢাকা-১২ আসনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি নির্বাচন করবেন।
আরও পড়ুন: নাগরিক ঐক্যের মান্না নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না, হাইকোর্টের রিট খারিজ
বিএনপি জানিয়েছে, যেসব আসনে শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে, সেখানে দলটি নিজস্ব কোনো প্রার্থী দেবে না। একই সঙ্গে শরিক দলগুলোও কেবল নির্ধারিত আসনগুলোতেই প্রার্থী দিতে পারবে—অন্য কোনো আসনে নয়। এই শর্তেই আসন সমঝোতা কার্যকর করা হচ্ছে। এছাড়া শরিক দলের নেতাদের বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিএনপি ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও দলটি পুরোপুরি মাঠে সক্রিয় থাকতে পারেনি।
আরও পড়ুন: তারেক রহমান দেশে ফেরার পরের যেসব কর্মসূচি নির্ধারিত হয়েছে
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দমন–পীড়নের পর এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হওয়ায় বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে নির্যাতনের শিকার অনেক নেতাও নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ পরিস্থিতিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। পরে তাকে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাও দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও তার প্রার্থিতার বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।
এ পর্যন্ত বিএনপি দুই দফায় মোট ২৭২টি আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। অবশিষ্ট ২৮টি আসন শরিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে চারটি আসন দেওয়া হয়েছে।
এসব আসনের মধ্যে সিলেট-৫ আসনে দলটির আমির উবায়দুল্লাহ ফারুক, নীলফামারী-১ আসনে মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জুনায়েদ আল হাবিব এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনির হোসেন কাসেমী প্রার্থী হবেন। পাশাপাশি এলডিপির মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ কুমিল্লা-৭ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আরও যেসব আসনে শরিক প্রার্থীরা থাকছেন—ঢাকা-১২ সাইফুল হক, ঢাকা-১৩ ববি হাজ্জাজ, নড়াইল-২ ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পটুয়াখালী-৩ ভিপি নুরুল হক নুর, ঝিনাইদহ-৪ রাশেদ খান, পিরোজপুর-১ মোস্তফা জামাল হায়দার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ জোনায়েদ সাকি।





