বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ, চার দিন ভারী বৃষ্টির আভাস

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, ০৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২:০২ অপরাহ্ন, ০৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী চার দিন একই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করবে। অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতও হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নিম্নচাপটি ভারতের ওডিশা ও সংলগ্ন অন্ধ্র প্রদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বুধবার (২ অক্টোবর) রাতেই এটি সমুদ্র থেকে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

আরও পড়ুন: সারাদেশে তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত, কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা

গভীর নিম্নচাপটি বর্তমানে সাগরে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

চারদিনের পূর্বাভাস

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পাঁচ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার চট্টগ্রাম এবং সিলেটের পাশাপাশি ঢাকাতেও বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। আগামী ৬ই অক্টোবর সোমবার পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলা হচ্ছে।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সামগ্রিকভাবে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে আকাশ মেঘলা থাকবে এবং বজ্রঝড়সহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণত সমুদ্র থেকে উপকুলে আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে এরপরও আরও চার দিন পর্যন্ত যে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবদুর রহমান বিবিসিকে বলেন, নিম্নচাপ মাটিতে চলে আসার পর বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পায়, সাগরে থাকা অবস্থায় পানি ও জলীয় বাষ্প থেকে শক্তি সঞ্চয় করে সেটার যোগান মাটিতে আসলে বন্ধ হয়ে যায় এবং আকাশের মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরাতে থাকে।

“নিম্নচাপ কিন্তু ৩০০-৪০০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বৃষ্টির বলয় তৈরি করে, সেখান থেকে যখন ল্যান্ড (ভূমি) ক্রস করে তখন আস্তে আস্তে যে মেঘের বলয় সৃষ্টি করে, সেখান থেকে বৃষ্টিপাত হতে থাকে” বলছিলেন মি. রহমান।

নিম্নচাপটি ভারতের দিকে অগ্রসর হলেও উপকূল অঞ্চল নিম্নচাপের কেন্দ্রে থাকায় উপকূল অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টিপাত বেশি থাকবে বলছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ঢাকায় যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, সেটা এবছর ২৪ ঘণ্টায় হওয়া সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হিসেবে বলা হচ্ছে। মি. রহমান জানান, ২০৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

কম সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক স্থানেই জলাবদ্ধতা হয়ে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর বৃষ্টিপাতের মাত্রা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। সাধারণভাবে বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর সেভাবে বৃষ্টিপাত হয়নি।নিম্নচাপ কী?

একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বায়ুচাপ আশেপাশের এলাকার তুলনায় কমে গেলে নিম্নচাপ তৈরি হয়। অর্থাৎ ওই স্থানে বাতাস হালকা হয়ে যায় এবং চারপাশ থেকে ভারী বাতাস এসে সেখানে মিলিত হয়। এ সময় বাতাস ওপরের দিকে উঠে গিয়ে ঠান্ডা হয়ে মেঘ ও বৃষ্টিপাত সৃষ্টি করে। অনেক সময় এটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপ হিসেবেও কাজ করে।

সাধারণত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রথম ধাপকে বলা হয় লঘুচাপ। লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ, এরপর গভীর নিম্নচাপ, এবং এর পরবর্তী পর্যায়ে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের তারতম্যের উপর নির্ভর করে এই ভাগগুলো করা হয়। লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ পর্যায় সাধারণত সমুদ্রেই হয়ে থাকে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সমরেন্দ্র কর্মকার বিবিসিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, লঘুচাপে বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৩১-৪০ কিলোমিটার। যখন সেটি ঘণ্টায় ৪১-৫০ কিলোমিটার হয়, তখন সেটি নিম্নচাপ, এবং ৫১-৬০ কিলোমিটার হলে সেটিকে গভীর নিম্নচাপ বলা হয়।

বাতাসের গতিবেগ বেড়ে ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি ঘূর্ণিঝড়, ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ১১৮-২২০ কিলোমিটার হলে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় এবং ২২১ কিলোমিটারের উপড়ে হলে সুপার সাইক্লোন বলা হয়। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে হওয়া ‘সিডর’ ছিল সুপার সাইক্লোন।

এবারের গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে “একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে” বলে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে।

তবে এবারের এই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এছাড়া এমাসের প্রথমার্ধের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কমে আসবে এবং বর্ষাকাল শেষ হবে বলে জানানো হচ্ছে।