জেঁকে বসেছে কনকনে শীত
- রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- তীব্র শীতের সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যখাতে
- কনকনে শীতে বিপাকে রাজধানীর ফুটপাতবাসী
- দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা
- টানা দুই দিন দেখা নেই সূর্যের, তীব্র শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়
রাজধানীতে জেকে বসেছে কনকনে শীত। এ অবস্থা চলবে আরো কয়েকদিন। আর মাসের শেষে আসতে পারে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এদিন বেলা ১১টার পর কোথাও কোথাও দেখা মিলেছে সূর্যের। ছিন্নমূল ও শ্রমজীবীদের পাশাপাশি বিপাকে শিশু ও বয়স্করা। এই শীতে হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। ভোরের এই কুয়াশা জানান দিচ্ছে অগ্রহায়ণ শেষে পৌষের আগমনি বার্তা। সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে বছরের প্রথম শৈত্য প্রবাহ দেখলো রাজধানীবাসী। ভোরের কনকনে ঠান্ডায় অপ্রস্তুত নগরবাসী। বেলা ১১টা নাগাদ আকাশে সূর্য উঁকি দিলেও উত্তাপ ছড়াতে পারেনি তেমন একটা। তবুও জীবিকার তাগিদে পথে নেমেছেন কর্মজীবী মানুষ। নগরজুড়ে ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া ও তাপমাত্রা কমার কারণে ছিন্নমূল, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। একইসঙ্গে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তবে ভোর থেকে দিনভর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। সীমান্তঘেঁষা এই জেলায় ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল বাতাসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গেছে। কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ ও ছিন্নমূল পরিবারগুলো। এদিন সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৭ শতাংশ। চলতি শীত মৌসুমে এটিই জেলায় এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও এটি। তবে তীব্র শীতের সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যখাতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ ছাড়া আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এতে বলা হয়েছে, উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এদিন সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৩ শতাংশ। এরআগে মঙ্গলবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন: মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি
তীব্র শীতের সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যখাতে: তীব্র শীতের সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যখাতে। এরইমধ্যে শীতের শুরুতে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। সবচেয়ে বিপাকে শিশুরা। ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়া ওয়ার্ডেই অনেক শিশু ভর্তি আছেন। শীতের এই সময়ে চিকিৎসার পাশাপাশি পারিবারিক যত্ন প্রয়োজন বলছেন চিকিৎসকরা। ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. জোহরা আক্তার বলেন, এ সময়ে বাচ্চাদের অবশ্যই গরম কাপড় পড়াতে হবে, তবে এত বেশি গরম কাপড় পড়ানো যাবে না যাতে বাচ্চা ঘেমে যায়। এছাড়া যাদের অ্যালার্জি রয়েছে, তারা বাহিরে যাবার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর চাপ বেড়েছে বহুগুণ। হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ জন বয়স্ক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। পাশাপাশি শিশু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন। শীতের কারণে ব্যাহত হচ্ছে দিনমজুরদের কাজ। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিকরা জানান, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করতে হলেও ঠান্ডা ও হিমেল বাতাসের কারণে স্বাভাবিকভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় কাজ বন্ধ রেখে আগুন পোহাতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমায় ভুগছেন। শীতের সময় সকালে মাঠে নামা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। ঠান্ডায় কাজ করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তবুও জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে। তবে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। মাসের শেষ ভাগ কিংবা নতুন বছরের শুরুতে চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, শীতের প্রকোপটা আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মতো আরো থাকবে। তবে এরপর তাপমাত্রা বাড়লেও শীত থাকবে। এছাড়া চলতি মাসের শেষের দিকে আবারও একটা শৈত্য প্রবাহ আসতে পারে। কথা হয় ঢাবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম এর সঙ্গে। তিনি বলেন, এই মান সাধারণত শূন্য থেকে পঞ্চাশের মধ্যে থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় এই মান ৩০০ পাড় হয়ে যায়। যা অস্বাস্থ্যকর, বিশ্বের অন্যান্য দেশের এমন পরিস্থিতি হলে অ্যালার্ট জারি করে জনগণকে সচেতন করা হয়। যা আমাদের এখানে এখনো করা হয়। নগরীর বাতাস অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে ঢাকা। যে কারণে দিন দিন রাজধানীর জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে বলে অভিমত পর্যবেক্ষণ পরিবেশবিদদের।
আরও পড়ুন: তাপমাত্রা কমার আভাস দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর
কনকনে শীতে বিপাকে নগরের ফুটপাতবাসী: কনকনে শীতে বিপাকে রাজধানীর খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত নিবারণে কম্বলের আশায় থাকেন অনেকে। মঙ্গলবার রাত তখন ১টায় আমিনা খাতুন নামে এক বৃদ্ধ মহিলা তীব্র শীতের মধ্যেই কাকরাইলের ফুটপাতে বসে অপেক্ষায় আছেন। যদি কারও কাছ থেকে একটা কম্বল পান। শীতকে উপেক্ষা করে তারমতো আরও অনেকেই বসে আছেন এই ফুটপাতে। আক্ষেপের সঙ্গে জানান, প্রচণ্ড শীত তারপরও কোনো উপায় নেই। রাতের ঢাকার পথে পথে দেখা মিলে রিকশা চালক, সিএনজি চালক কিংবা নিরাপত্তা প্রহরীর মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের। কনকনে শীতের রাতে জীবন জীবিকার তাগিতে বাহির হওয়া এসব মানুষ আছেন বেশ কষ্টে। রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলকায় শীত মোকাবিলায় এসব মানুষ অনেকেই জ্বালিয়েছেন আগুন। তবে শ্রমজীবী এসব মানুষরা জানান, তীব্র শীতের কারণে যান চলাচল কম, মানুষও ঘর থেকে বের হয় না।
টানা দুই দিন দেখা নেই সূর্যের, তীব্র শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়: উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। ঘন কুয়াশা আর কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। বিশেষ করে গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা বহুগুণ বেড়ে গেছে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় দিনভর তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৯ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১-১২ কিলোমিটার। এর আগে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, একদিনের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য মাত্র ৪ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে, যা শীতের প্রকোপ বাড়িয়ে দিয়েছে। একইভাবে শীত মৌসুমের শুরুতেই দেশের উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল গড়িয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলে না, ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ছে। দুপুরের দিকে সাময়িকভাবে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের দাপট তেমন কমে না। হিমেল হাওয়ায় সারাদিনই শীত অনুভূত হচ্ছে। দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। তবে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, ভ্যানচালক ও খোলা আকাশের নিচে থাকা অসহায়দের। শীত থেকে বাঁচতে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে বেড়েছে মানুষের ভিড়। বিক্রি বেড়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট ও কম্বলের। ঘন কুয়াশার প্রভাব পড়েছে সড়ক ও মহাসড়কেও। কম দৃশ্যমানতার কারণে যান চলাচল হচ্ছে ধীরগতিতে। দুর্ঘটনা এড়াতে চালকরা হেডলাইট জ্বালিয়ে ও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে চলাচল করছেন। এ অবস্থায় শীতার্ত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন মহল।





